শেখার আছে অনেক কিছু জানার এখনো অনেক বাকী

ভাই/আপু এই লেখাটা তোমার জন্যে……………আল্লাহর পথ

আশা করি এই লেখাটি তোমার চোখ খুলে

দিবে। সবকিছু নতুন করে ভাবতে সহায়তা

করবে। লেখাটি খুব মনোযোগ সহকারে শেষ

পর্যন্ত পড়ার আন্তরিক অনুরোধ রইল।

জাযাকাল্লাহ খাইরান।

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম

তোমাকে প্রথমেই একটা কথা বলে রাখি,

আমি খুব বিষণ্ণ মন নিয়ে এই লেখাটা লিখতে

বসেছি। তবে এই বিষণ্ণতা তথাকথিত

গার্লফ্রেন্ড চলে যাওয়ার বিষন্নতা নয় বা

এই পৃথিবীতে কোনোকিছু হারানোর

বিষণ্ণতা নয়। এই বিষণ্ণতা তোমাকে এই

কথাগুলো আগে বলতে না পারার অযোগ্যতার

বিষণ্ণতা, আমাদের চারিপাশে যা কিছু

হচ্ছে তা সইতে না পারার বিষণ্ণতা। সবাই

যখন পরীক্ষার পড়াশোনা নিয়ে খুব ব্যস্ত

আমি তখন তোমাকে লিখতে বসেছি কারণ

আমার কাছে মনে হয়েছে আমার এই

পরীক্ষার চেয়ে তোমাকে এই কথাগুলো বলা

বেশী প্রয়োজন, বেশী গুরুত্বপূর্ণ। হয়ত আমার

এই কথাগুলো তোমার ভালো নাও লাগতে

পারে তারপরেও লিখলাম শুধুমাত্র আল্লাহর

সন্তুষ্টির জন্যে।

প্রারম্ভিক কিছু কথাঃ-এসো আলোর পথে

কি সুন্দর এই পৃথিবী! চোখ জুড়ানো বিস্তীর্ণ

শ্যামল শস্য ক্ষেত। গাছের ডালে ডালে রঙ-

বেরঙের ফুল ও ফল, তারই মাঝে রঙ-বেরঙের

পাখ-পাখালি ও প্রজাপতির মনভুলানো

খেলা। মন জুড়িয়ে যায়। মন জুড়িয়ে যায়

বিরাট খোলা আকাশটার দিকে তাকিয়ে।

মেঘের কোলে ভেসে বেড়াচ্ছে স্বাধীন

ডানা মেলা পাখিরা, রোদ হাসছে ঝিকমিক।

কি সুন্দর! কি সুন্দর এই সৃষ্টি! কি বিরাট

বিস্ময়কর এই সৃষ্টি! সৃষ্টির এই সৌন্দর্য

উপভোগ করে শেষ করা যায় না। এর সীমা-

সংখ্যা গুনে শেষ করা যায় না। বিশ্বের

প্রতিটি অনু পরমাণু মেনে চলেছে আল্লাহর

আইন। এই শৃংখলার কোন ব্যতিক্রম নেই। আর

এ জন্যেই এই বিশ্বজগত এতো সুন্দর। বিরাট এ

বিশ্বজগতে বিরাজ করছে অনাবিল শান্তি,

ঐক্য আর শৃংখলা। কে না চায় এই এতো সুন্দর

বিশ্বজগতে বেঁচে থাকতে!!

মানুষ এই দুনিয়ার সুন্দরতম সৃষ্টি। আশরাফুল

মাখলুকাত বলা হয় তাকে। অন্যান্য সৃষ্টি

থেকে আলাদা তার মর্যাদা। বিশেষ তার

স্থান। মানুষ এই দুনিয়ায় আল্লাহর খলীফা বা

প্রতিনিধি, আল্লাহ্ মানুষকে দিয়েছেন

জ্ঞান-বিবেক, দিয়েছেন ভালো মন্দ বুঝার

ক্ষমতা। সে যেমন এই জ্ঞানের আলোকে

ভালো কাজ করতে পারে তেমনি রয়েছে

খারাপ কাজ করার তার ক্ষমতা ও

স্বাধীনতা। কিন্তু কেন আল্লাহ্ তায়ালা

মানুষকে এই বিশেষ মর্যাদা দিলেন? কেন

দিলেন এমন স্বাধীনতা? এর পিছনে রয়েছে

আল্লাহর এক মহান উদ্দেশ্য। তা হলো, বিশ্ব

প্রকৃতির অন্যান্য সৃষ্টি যেমন আল্লাহর নিয়ম

মেনে তৈরি করেছে অনাবিল শান্তির জগত

তেমনি মানুষ তার স্বাধীনতা থাকা সত্ত্বেও

যেন আল্লাহ্র পথকে বেঁচে নিতে পারে।

খারাপ কাজ করার ক্ষমতা ও স্বাধীনতা

থাকা সত্ত্বেও যাতে করে সে নিজের

ইচ্ছায় আল্লাহর আইনের গোলামীকে বরন

করে নিতে পারে। আর তারই ফলে তাদের

জীবনে নেমে আসবে অনাবিল শান্তি।

পৃথিবীতে গড়ে উঠবে এক সুন্দর শান্তিপূর্ণ

সমাজ ব্যবস্থা। আর আখেরাতের অশেষ

পুরষ্কার তো রয়েই গেছে। এবার আসি মূল

কথায়ঃ-

১) তোমার জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি?

পড়াশুনা করেছি কিন্তু স্কুল জীবনে “Aim in

life বা জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য” নিয়ে রচনা

লিখিনি বা পড়িনি এমন একজনও খুজে

পাওয়া যাবেনা। আমরা প্রত্যকেই মুখস্ত কিছু

কথা লিখেছি যে, আমি বড় হয়ে ডাক্তার

হতে চাই। ডাক্তার হয়ে বিনামূল্যে মানুষের

চিকিৎসা করে মানুষের সেবা করতে চাই।

কেউবা আবার লিখেছি শিক্ষক হয়ে

সমাজকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে

চাই। আবার কেউবা লিখেছি ইঞ্জিনিয়ার

হতে চাই। কিন্তু একবার চিন্তা করে দেখতো

যে ছেলেটা ডাক্তার হতে চেয়েছিল সে

আজ হয়ত পড়ছে ইতিহাস বা বাংলা বা

ইংরেজী সাহিত্য নিয়ে। যে ছেলেটা

ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছিল সে হয়ত আজ

পড়ছে প্রানীবিজ্ঞান বা উদ্ভিদবিজ্ঞান

নিয়ে বা অন্য যেকোনো বিষয়ে। আর যে

ছেলেটা শিক্ষক হতে চেয়েছিল তার

হয়তোবা স্কুলের গণ্ডি পেরোনই হয় নাই।

আসলে বাস্তবতা বড়ই নিষ্ঠুর। একজনকে যদি

দান করে শতজনকে করে বঞ্চিত। আজ

তোমার জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভিন্ন। এখন

আর ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করা বা

শিক্ষক হয়ে সমাজকে শিক্ষার আলোয়

আলোকিত করা তোমার জীবনের উদ্দেশ্য নয়।

তোমার দরকার কাড়ি কাড়ি টাকা-পয়সা,

অর্থ-বিত্ত-প্রাচুর্য ও প্রভাব-প্রতিপত্তি।

তোমার দরকার সমাজের বাহবা। সমাজ

তোমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবে, তোমাকে

দেখে চেয়ারটা ছেড়ে দিবে, সমাজ

তোমাকে স্বীকৃতি দিবে তুমি জীবনে সফল

(?), সমাজ বলবে তুমি তোমার বাবা-মার মুখ

উজ্জ্বল করেছো, এগুলোই হচ্ছে এখন তোমার

একমাত্র চাওয়া। আর একটা সুন্দরী রমণীর

সাথে প্রেম করা বা বিয়ে করার বাসনা

সেটা তো তোমার মনের ভিতরে সবসময়ই কাজ

করে। তোমার দরকার বড় বড় সার্টিফিকেট,

পি এইচ ডি ডিগ্রী যাতে বিয়ের বাজারে

তোমার কদর একটু বেশীই থাকে। তুমি

স্বীকার না করলেও প্রত্যক্ষ বা

পরোক্ষভাবে এগুলোই যে তোমার জীবনের

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তা তুমি অস্বীকার করতে

পারবেনা। হয়ত বলবে এগুলো কে না চায়? হ্যা

আমিও জানি এগুলো প্রায় সবাই চায়। তাই

তুমিও চাও, মনেপ্রাণে চাও, যেকোনো মূল্যে

চাও । আর তুমি তোমার এই চাওয়াগুলোকে

পূরন করার জন্যে প্রাণপণ চেষ্টা সাধনা

করে চলেছ। যে তুমি তোমার আরামের

ঘুমটুকু ভেঙ্গে ফজরের নামাজটুকু পড়তে

পারোনা সেই তুমি পরীক্ষার টেনশনে

সারারাত ঘুমাতে পারোনা। কখন কিভাবে

ভোর হয়ে যায় তুমি বলতেই পারোনা কিন্তু

তোমার পড়া শেষ হয় না আর ফজরের দুই

রাকাত ফরজ নামাজ পড়ারও সময়তো

এমনেই হয়না। বই নিয়ে, গ্রুপস্টাডি নিয়ে

বন্ধুদের সাথে এতোটাই ব্যস্ত থাক যে পাঁচ

ওয়াক্ত নামাজ পড়ার জন্যে ২৪ ঘণ্টার

মধ্যে তিরিশ মিনিট সময় তোমার হয়না।

কারণ তুমি জান যে এবং তোমাকে

জানানো হয়েছে যে এই পরীক্ষায় তুমি

ভালো করতেই হবে, না করতে পারলে

তোমার স্বপ্নগুলো পূরন হবে না। এই

পরীক্ষায় ভালো না করতে পারলে তোমার

একটা আরাম আয়েশি জীবন, একটা সুন্দর

বাড়ি, একটা সুন্দরী নারী এবং একটা সুন্দর

গাড়ী পাওয়া হবে না। আর এগুলো না

ফেলে তোমার জীবন একেবারে ব্যর্থ।

সমাজ তোমাকে ব্যর্থদের কাতারে ফেলে

দিবে, সমাজ তোমার কুৎসা করবে, সমাজ

বলবে তুমি শেষ, তুমি কোন কাজের না,

তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। তাই তুমি

পাগলের মত ছুটে চলেছ এসবের পেছনে।

কিন্তু তুমি একবার ভাবনি তুমি কিসের

পেছনে ছুটছো, কিসের জন্যে ছুটছো। অবশ্য

তা ভাবার মত তোমার সময় কোথায়?

ক) মনে করো তুমি পরীক্ষা দিয়ে ফার্স্ট

ক্লাস ফার্স্ট হয়েছ এবং দুই দিন পরে

ডিপার্টমেন্টের টিচার হবে কিন্তু কিছু দিন

পরেই তুমি মারা গেলে। এখন বল কি হবে

তোমার ওইসব ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট

সার্টিফিকেট দিয়ে। কেজির দরে বিক্রি

করা ছাড়া আর কোন কাজে আসবেনা। আর

কেজির দরে বিক্রি করলেও তো দুই টাকার

বেশী হবে না। এখন চিন্তা করো তোমার

সারা জীবনের অর্জন তোমার মৃত্যুর সাথে

সাথেই দুই টাকা হয়ে গেল বা তারও কম।

খ) মনে করো গুলশানে তোমার একটা বিশাল

বাড়ী হল এবং বাড়ীটিতে উঠার একদিন

পরেই তুমি মারা গেলে কি হবে তোমার এই

বাড়িটার? মনে করো তোমার একটা লাখ

টাকা বেতনের একটা চাকরি হল এবং একটা

গাড়ী হল এবং তুমি ওই গাড়ীতে করে প্রথম

দিন অফিসে যাওয়ার পথেই দুর্ঘটনায় মারা

গেলে তখন কি হবে তোমার ওই লাখ টাকার

চাকরি আর বিলাসবহুল গাড়ীর? আচ্ছা মনে

করো খুব সুন্দরী একটা মেয়ের সাথে তোমার

বিয়ে হল এবং বাসর রাতের পরের দিনই তুমি

মারা গেলে তখন কি হবে তোমার ওই সুন্দরী

স্ত্রীর? এগুলো কি তোমার সাথে কবরে

নিয়ে যাবে নাকি? নিয়ে যাওয়া তো দূরের

কথা তুমি মারা যাওয়ার পর তোমার ওই

ভালোবসার মানুষটিই ভয়ে তোমার সাথে

একরাত থাকতেও চাইবেনা। তোমার যে

স্ত্রী কখনো তোমাকে ছাড়া একরাত থাকতে

পারতোনা তোমার সেই স্ত্রীই বলবে যত

তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমাকে যেন দাফন করা

হয়। এটাই চরম বাস্তবতা এবং এটাই চরম সত্য।

একবার ভেবে দেখ তোমার মৃত্যুর সাথে

সাথেই তোমার সব বৈষয়িক অর্জন, প্রভাব-

প্রতিপত্তি সব কিছু এক মুহূর্তের মধ্যে শূন্য

হয়ে যাবে। তোমার অতি কাছের মানুষগুলো

চিরদিনের জন্যে তোমার পর হয়ে যাবে।

যাদের জন্যে তুমি পৃথিবীতে এতো কিছু

করেছো কেউ তোমার সামান্য উপকারে

আসবেনা। কেউ তোমাকে বিন্দু পরিমাণ

সাহায্য করতে পারবেনা এমনকি তোমার

গর্ভধারিণী মাও পর্যন্ত তোমার জন্যে কিছু

করতে পারবেনা এক দোয়া করা ছাড়া।

আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ-

“আর ভয় করো সেই দিনকে যেদিন কেউ

কারো সামান্যতম উপকারে আসবেনা,

কারো পক্ষ থেকে কোন সুপারিশ গৃহীত

হবেনা এবং বিনিময় নিয়েও সেদিন

কাউকে ছেড়ে দেওয়া হবেনা।”-সুরা আল

বাকারাঃ ৪৮

তাহলে এখন ভাবো কি নিয়ে যাবে তোমার

সাথে যেটা তোমাকে সেদিন সাহায্য করবে

যেদিন কেউ তোমাকে সাহায্য করতে

পারবেনা। শুধুমাত্র একটা জিনিসই তোমাকে

সাহায্য করতে পারবে সেটা হচ্ছে তোমার

আমল অর্থাৎ তোমার কৃতকর্ম। আর সেটাকে

গুরুত্ব না দিয়েইতো তুমি এসবের পিছনে

পাগলের মত ছুটে চলেছ। তাহলে তখন্ তোমার

কি অবস্থা হবে একবার ভাব। অবশ্য তোমাকে

ভাবতে হবে না কারণ সেটা আল্লাহ্

তায়ালাই তোমাকে সতর্ক করার জন্যে

পবিত্র কোরআনে বার বার বলে দিয়েছেন।

কিন্তু তুমি এতোটাই দুর্ভাগা যে সেই সতর্ক

বানীগুলো তোমার কানে পৌঁছায়না বা

নিজে জানারও প্রয়োজনবোধটুকু করোনা।

আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কোরআনে

বলেনঃ-

“আর যার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া

হবে সে বলবেঃ হায়! আমার আমলনামা

যদি আমাকে আদৌ দেয়াই না হতো এবং

আমার হিসেব যদি আমি আদৌ না

জানতাম তাহলে কতই না ভাল হত ৷ হায়!

আমার মৃত্যুই যদি আমার শেষ হতো। আজ

আমার অর্থ-সম্পদও কোন কাজেই আসলো

না ৷ আমার সকল ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি

বরবাদ হয়ে গেল।–সুরা আল হাক্কাহঃ

২৫-২৯

এখন ভাবো কি হওয়া উচিত তোমার জীবনের

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। আবারো ভাবো!!!এসো আলোর পথে । এই

দুনিয়ার প্রতিপত্তি নাকি আখিরাতে মুক্তি।

২) আচ্ছা বলতো কেন তোমাকে সৃষ্টি করা

হয়েছে?

তুমিতো এই পৃথিবীর সামান্য কিছু বৈষয়িক

সুখের জন্যে হাজার হাজার পৃষ্টা পড়ে

চিন্তা করতে পারো, লিখতে পারো, বলতে

পারো কিন্তু কখনো কি একবার ভেবে

দেখেছো যে কেন তোমাকে তোমার প্রভু

সৃষ্টি করেছেন?। শুধুমাত্র কি এই জন্যে যে

তুমি তুমি জন্ম নিয়ে ছোট থেকে বড় হবে,

পড়াশুনা করবে, তারপর একটা ভালো চাকরি

করবে, তারপর বিয়ে করে সুখে শান্তিতে

সংসার করবে, তারপর বৃদ্ধ হবে এবং তারপর

একদিন এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিবে?

অনেকটা পশু পাখির মতই। তাহলে তুমি যে

আশরাফুল মাখলুখাত এই কথার সত্যতা থাকল

কোথায়? আচ্ছা একবার গভীরভাবে চিন্তা

করতো যিনি এই বিশ্বজগতের স্রষ্টা, অসীম

জ্ঞানী, যার সৃষ্টিতে কোন ভুল বা ত্রুটি নেই

সেই তিনি কীভাবে তোমাকে এতো বুদ্ধি,

বিবেক, প্রজ্ঞা দিয়ে সুন্দরতর আকৃতিতে

সৃষ্টি করে কোন কারণ বা উদ্দেশ্য ছাড়াই এই

পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিয়েছেন? তুমি হয়ত

জানো না বা জানবার প্রয়োজনীয়তাটুকুও

বোধ করোনা কেন আল্লাহ্ তোমাকে সৃষ্টি

করেছেন। কিন্তু সেটা আল্লাহ্ আল্লাহ্

তায়ালা পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্টভাবে বলে

দিয়েছেন। আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ-

“আমি জিন ও মানুষকে আমার ইবাদত ছাড়া

অন্য কোন উদ্দেশ্য সৃষ্টি করিনি।”-সুরা আয

যারিয়াতঃ ৫৬

উপরের আয়াতটা বার বার পড় এবং দেখতো

বুঝতে কোন অসুবিধা হয় কিনা, কি কারণে

আল্লাহ্ তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি

জানি একটা ছোট শিশুরও বুঝতে অসুবিধা

হওয়ার কথা না।

অর্থাৎ আল্লাহ্ তায়ালা তোমাকে এতো

বুদ্ধি, বিবেক, প্রজ্ঞা দিয়ে সুন্দরতর

আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তার

অর্থাৎ আল্লাহর ইবাদতের জন্যে। এখন

তোমার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, আমি কি

তাহলে এই পৃথিবীর কিছুই পাবো না বা

কিছুই ভোগ করতে পারবোনা বা অন্য

কোনকিছুই করতে পারবোনা? অবশ্যই পারবে,

সব কিছুই করতে পারবে। তবে সেটা আল্লাহ্ ও

তার রাসুলের দেখানো পথে হতে হবে।

আল্লাহ্ ও তার রাসুলের দেখানো পথে তুমি

যা করবে বা আল্লাহ্ ও তার রাসুলের

নিষেধে যা পরিত্যাগ করবে তার সবটাই

ইবাদত। যদি তুমি আল্লাহ্ ও তার রাসুলের

নির্দেশমত রাস্তা দিয়ে হাট এবং আল্লাহ্

তার রাসুলের আদেশমত রাস্তা দিয়ে হাটার

সময় নিষিদ্ধ কাজগুলো থেকে বিরত থাক

তাহলে রাস্তা দিয়ে হাঁটাটাও তোমার

জন্যে ইবাদত বলে গন্য হবে যেমনিভাবে

আল্লাহ্ ও তার রাসুলের দেখানো পদ্ধতিতে

নামাজ পড়া, রোজা রাখা, যাকাত আদায়

করা, হজ্জ করা ইবাদত হিসেবে গন্য হয়। তুমি

যদি সৎ পথে তোমার পরিবারের জন্যে

জীবিকা নির্বাহ করো তাহলে সেটাও

তোমার জন্যে ইবাদত হিসেবে গন্য বা কবুল

হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রী বা স্বামীর

সাথে যে সময়টুকু কাটাবে সেটাও ইবাদত

বলে গন্য হবে যদি সেটা আল্লাহ্ ও তার

রাসুলের দেখানো পথ অনুসারে হয়। এমনকি

তোমার ঘুমটাও ইবাদত হবে যদি সেটা আল্লাহ্

ও তার রাসুলের নির্দেশিত পন্থায় হয় । রাসুল

(সাঃ) বলেনঃ-

“যে ব্যক্তি ইশার নামাজ জামাতের সাথে

পড়ল যে যেন অর্ধরাত অবধি নামাজ আদায়

করল। আর এর পর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ

জামাতের সাথে আদায় করল সে যেন

সারা রাত নামাজ আদায় করল। অর্থাৎ

মাঝখানে তার ঘুমটাও নামজের মত ইবাদত

হিসেবে গন্য হবে। ”- সহীহ মুসলিম

৩) কেন তুমি আশরাফুল মাখলুখাত?

তুমি ইসলাম সম্পর্কে খুব ভালো না জানলেও

অন্তত এইতুকু জানো যে মহান আল্লাহ্

তায়ালা তোমাকে আশরাফুল মাখলুখাত বা

সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।

কিন্তু কখনি কি একবার ভেবে দেখেছো

কেন তুমি সৃষ্টির সেরা। নাকি তুমি এমনি

এমনিই তুমি সৃষ্টির সেরা!!এইটা বলা কি চরম

নিরবুদ্ধিতা না বল? তুমি নিজেও কি অন্য

কাউকে শুধু শুধু সেরা বলে বলে মেনে নিবে?

তুমি জানো যে তোমার বাবা তোমার

পরিবারের শ্রেষ্ঠ কারণ তোমার বাবা

তোমার পরিবাবের সকল দায়িত্ব বহন করেন।

তেমনিভাবে তোমাকে কিছু দায়িত্ব দিয়ে

সৃষ্টি করা হয়েছে যেটা অন্য কোন

প্রানীকে দেয়া হয় নাই আর সে জন্যেই তুমি

আঁশরাফুল মাখলুখাত বা সৃষ্টির সেরা।

আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কোরআনে

বলেনঃ

“ তোমরা হলে উত্তম জাতি। তোমাদেরকে

সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষের কল্যান

সাধনের জন্যে। তোমাদের কাজ হল,

তোমরা মানুষকে সত্যের পথে চলার আদেশ

করবে এবং অন্যায় কাজ থেকে বিরত

রাখবে।”-সুরা আল ইমরানঃ ১১০

দেখ আল্লাহ্ কত স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন

কেন তোমাকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে সৃষ্টি

করেছেন। এখন বল এই দায়িত্ব পালন না

করলে কি তুমি আর শ্রেষ্ঠ থাকবে বা থাকতে

পারবে? থাকতে পারবেনা। তাহলে কি হবে

তোমার অবস্থান? সেটাও কিন্তু আল্লাহ্

তায়ালা পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেনঃ

“আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম

আকৃতিতে। অতঃপর থাকে নামিয়ে

দিয়েছি নিকৃষ্ট থেকে নিকৃষ্টতর

অবস্থানে।”- সুরা আত ত্বীনঃ ৪-৫

অর্থাৎ তুমি যদি তোমার এই দায়িত্ব মানে

“সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ”

পালন না করো বা পালনে অবহেলা করো

তাহলে তোমাকে এক নিকৃষ্ট স্তরে নামিয়ে

দেয়া হবে। অর্থাৎ পশু পাখিরও নীচের স্তরে।

এখন একটু চিন্তা করতো তোমাকে যে

দায়িত্ব দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে সেটা

সম্পর্কে কতটুকুই বা জানো কতটুকুই বা পালন

করছো। যদি না করে থাক তাহলে তোমার

অবস্থানটা কি পশুর চেয়েও নীচে নেমে

গেলনা?

৪) আচ্ছা বলতো কেন আমরা বেঁচে আছি?

আচ্ছা ভাইয়া বা আপু কখনো কি একবার

চিন্তা করেছো কেন আমরা বেঁচে আছি?

কিসের জন্যে বেঁচে আছি? খাবো-দাবো,

সেক্স করবো, আমোদ-ফুর্তি করবো শুধু কি এই

জন্যেই বেঁচে আছি? যদি শুধুমাত্র খাওয়া-

দাওয়া, সেক্স, আমোদ-ফুর্তি বেঁচে থাকার

উদ্দেশ্য হয় তাহলে তো আমাদের আর পশু

পাখির মধ্যে কোন পার্থক্যই থাকলোনা।

বরং তখন পশু পাখির জীবনটা আমাদের চেয়ে

অনেক সুন্দর হবে কারণ ওদের খাওয়া-দাওয়া,

সেক্সের জন্যে অতটা পরিশ্রম করতে হয় না

যতটা করতে হয় মানুষের। যদি বল খাওয়া-

দাওয়া, সেক্স, আমোদ- ফুর্তিই বেঁচে থাকার

উদ্দেশ্য না তাহলে কেন আমরা বেঁচে আছি

সেই কারণটা অবশ্যই তোমাকে বের করতে

হবে। আর এই জন্যে তোমাকে ফিরে যেতে

হবে আল কোরআনের ছায়াতলে। না হলে

হাজার হাজার পৃষ্টা পড়েও অন্ধকারে

হাতড়িয়ে মরবে কিন্তু বেঁচে থাকার সঠিক

উদ্দেশ্যটাই আবিষ্কার করতে পারবেনা।

আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কোরআনে

বলেনঃ

“এই সেই রমজান মাস, যে মাসে কোরআন

নাযিল করা হয়েছে; যা মানুষের জন্যে

হেদায়াত স্বরূপ, যা এমন স্পষ্ট উপদেশে

পরিপূর্ণ যে, তা সঠিক পথ দেখায় এবং হক

ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য পরিস্কারভাবে

তুলে ধরে।”- সুরা আল বাকারাঃ ১৮৫

৫) এই দুনিয়ার সাফল্যই কি প্রকৃত সাফল্য?

আচ্ছা এই দুনিয়ার সাফল্যই কি প্রকৃত সাফল্য?

এই দুনিয়াতে অঢেল টাকা-পয়সা, গাড়ী-

বাড়ী, প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং সুন্দরী রমণী

পাওয়াটাই কি প্রকৃত সাফল্যের মূল নিদর্শন?

দেখা যাক এই দুনিয়ার সৃষ্টিকর্তা মহান

আল্লাহ্ তায়ালা এই দুনিয়ার তথাকথিত

সাফল্য নিয়ে কি বলেনঃ

“তারা তাদের এই দুনিয়ার জীবনে যা কিছু

ব্যয় করছে তার উপমা হচ্ছে এমন বাতাস

যার মধ্যে আছে তূষার কণা ৷ যারা

নিজেদের ওপর জুলুম করেছে তাদের

শস্যক্ষেতের ওপর দিয়ে এই বাতাস

প্রবাহিত হয় এবং তাকে ধ্বংস করে দেয় ৷

আল্লাহ তাদের ওপর জুলুম করেননি৷ বরং

প্রকৃতপক্ষে এরা নিজেরাই নিজেদের ওপর

জুলুম করেছে৷পার্থিব জীবন ছলনাময় সম্পদ

ছাড়া কিছুই নয়।”- সুরা আল ইমরানঃ ১১৭

“পার্থিব জীবন ছলনাময় সম্পদ ছাড়া কিছুই

নয়।”-সূরা আলে ইমরানঃ ১৮৫

“পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক ব্যতীত

কিছু নয়, যারা সংযত হয় তাদের জন্য

পরকালের আবাসই শ্রেষ্ঠতর। তোমরা কি

তা বোঝ না?”-সূরা আল-আন’আমঃ ৩২

“এই পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক

ব্যতীত কিছুই নয়। পরলৌকিক জীবনই তো

প্রকৃত জীবন।”-সূরা আল-আনকাবূতঃ ৬৪

“এই পার্থিব জীবন তো অস্থায়ী

উপভোগের বস্তু এবং পরকাল হচ্ছে

চিরস্থায়ী আবাস।”-সূরা আল-মু’মিনঃ ৩৯

“তোমরা জেনে রেখো, পার্থিব জীবন তো

ক্রীড়া-কৌতুক, জাঁকজমক, পারস্পরিক

গর্ববোধ ও ধন-জনে প্রাচুর্য লাভের

প্রতিযোগিতা ব্যতীত আর কিছু নয়।”-সূরা

আল-হাদীদঃ ২০

উপরের আয়াতগুলো বার বার পড় আর চিন্তা

করো কিসের পেছনে পাগলের মত ছুটছু।

৬) আখিরাতের সাফল্যই প্রকৃত সাফল্য।

এই দুনিয়ার সাফল্য সে প্রকৃত সাফল্য নয় এই

কথাতি বুঝতে বা উপলব্ধি করতে কোন

বিবেকবান মানুষেরই অসুবিধা হওয়ার কথা

না। কেননা এই দুনিয়ার সাফল্য নশ্বর,

অস্থায়ী। এই দুনিয়ার সাফল্য আজ আছে তো

কাল নেই। যেকোনো মুহূর্তে ধ্বংস হয়ে

যেতে পারে। প্রকৃতপক্ষে আখিরাতের

সাফল্যই যে প্রকৃত সাফল্য যে কেউ সামান্য

একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবে। কেননা

আখিরাতের সাফল্য অবিনশ্বর, চিরন্তন। তা

কখনো হারিয়ে যাবার নয় বা ধ্বংস হবার নয়।

আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেনঃ

“অবশেষে প্রত্যেক ব্যক্তিকেই মরতে হবে

এবং তোমরা সবাই কিয়ামতের দিন

নিজেদের পূর্ণ প্রতিদান লাভ করবে।

একমাত্র সেই ব্যক্তিই সফলকাম হবে, যে

সেখানে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা

পাবে এবং যাকে জান্নাতে প্রবেশ

করানো হবে ৷ আর এ দুনিয়াটা তো নিছক

একটা বাহ্যিক প্রতারণার বস্তু ছাড়া আর

কিছুই নয়।”- সুরা আল ইমরানঃ ১৮৫

“সে সময় যাকে তার আমলনামা ডান হতে

দেয়া হবে, সে বলবেঃ নাও, তোমরাও

আমার আমলনামা পড়ে দেখো, আমি

জানতাম, আমাকে হিসেবের সম্মুখীন হতে

হবে। তাই সে মনের মত আরাম আয়েশের

মধ্যে থাকবে সুউচ্চ মর্যাদার জান্নাতে।

যার ফলের গুচ্ছসমূহ নাগালের সীমায়

অবনমিত হয়ে থাকবে । এসব লোকদের কে

বলা হবেঃ অতীত দিনগুলোতে তোমরা যা

করে এসেছো তার বিনিময়ে তোমরা

তৃপ্তির সাথে খাও এবং পান করো।”- সুরা

আল হাক্কাহঃ ১৯-২৪

৭) এবার তোমাকে কিছু অপ্রিয় সত্য কথা

বলি।

এবার তোমাকে কিছু অপ্রিয় সত্য কথা বলি।

হয়ত তোমার কাছে কথাগুলো কটু মনে হতে

পারে। তাতে কি? আমি যদি তোমাকে এতো

ভালোবাসতে পারি, তোমার জন্যে লিখতে

পারি তাহলে কি তোমার বৃহত্তর কল্যাণের

জন্যে তোমাকে কয়েকটা কটু কথা বলার

অধিকার রাখিনা বল? আর একটা প্রবাদই তো

আছে যে, “শাসন করা তারই সাজে সোহাগ

করে যে”।

ক) একটু চিন্তা করে দেখতো তোমাকে

অনার্স পাস করতে হলে ছোটবেলা থেকে

অনার্স পর্যন্ত কমপক্ষে ১৩৫ টি বই পরতে হয়

(প্রতি বিষয়ের জন্যে কমপক্ষে একটি করে

বই ধরে কিন্তু অনেক সময় আমদেরকে একটা

বিষয়ের জন্যে তিনটা থেকে চারটা পর্যন্ত

বই পরতে হয়)। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে

এই কমপক্ষে ১৩৫ তার মধ্যেও তোমার

জীবনের জন্যে সবচেয়ে অত্যাবশ্যকীয় একটা

বই(আল কোরআন) থাকেনা। তোমার এই

পৄথিবীতে একটা চাকরীর জন্যে শত শত

আজেবাজে বই পড়ার সময় হয় কিন্তু আল

কোরআন পড়ার সময় হয়না। তার পরেও তুমি

নিজেকে মুসলমান বলে পরিচয় দাও!!,আল্লাহর

কাছে মুক্তির আশা করো!!। আমার মনে হয়

আমাদের নিজেদের একটু লজ্জিত হওয়া

উচিত।

খ) একবার চিন্তা করতো সাময়িক কিছু

বিনোদনের জন্যে তুমি হাজার হাজার টাকা

খরচ করে হুমায়ূন আহমেদের বই, জাফর

ইকবালের বই, বিভিন্ন মুভি ডিস্ক এবং আরও

কত কি কিনতে পারো কিন্তু মাত্র হাজার

বারোশ টাকা খরচ করে ইসলাম বুঝার জন্যে

একটা কোরআনের তাফসীর বা কয়েকটা

ইসলামিক বই কিনতে পারোনা। তা পারবে

কেন? তুমি তো আধুনিক ছেলে বা মেয়ে!!

তোমার কি কোরআনের তাফসীর আর

ইসলামিক বই পড়ার সময় আছে? তোমার সময়

আছে একরাতে দুই তিনটা মুভি দেখে শেষ

করার!!তোমার সময় আছে টিএসসিতে বন্ধু

বান্ধবীদের সাথে জমিয়ে আড্ডা দেয়ার!!

তোমার সময় আছে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে

পার্কে বসে নিভৃতে আড্ডা দিয়ে ঘণ্টার পর

ঘণ্টা সময় নষ্ট করার!! তোমার সময় আছে

গার্লফ্রেন্ডের সাথে সারারাত জেগে

ফোনালাপ করার!!। তোমার কি ইসলাম নিয়ে,

কোরআন- হাদিস নিয়ে আলোচনা করার সময়

আছে? তা থাকবে কেন ? তোমার সময়গুলো

হচ্ছে এক্তা টাইগার, ডার্টি পিকচার আর

বলিউডের কোন মুভিটা কত হিট হয়েছে তা

নিয়ে বন্ধুদের সাথে আলোচনায় হারিয়ে

যাওয়ার। কোন মুভি প্রথম দিনেই কত মিলিয়ন

ডলার আয় করছে তা একেবারে তোমার

নখদর্পণে। স্প্যানিশ লীগে, ইংলিশ

প্রিমিয়ার লীগে কে কয়টা গোল করছে সব

তোমার মুখস্ত। আগামী বছর কে ব্যালন ডি

জিতবে তাও বলে দিতে পারবে। পৃথিবীর সব

বিষয়ের জ্ঞান তুমি রাখো। তুমি সবই বলে

দিতে পারবে। বলতে পারবেনা শুধু পবিত্র

কোরআনে কয়টা সূরা আছে, সিহাহ সিত্তাহ

মানে কি। সত্যি তোমার জন্যে আমার করুনা

হয়, তোমার জন্যে আমার লজ্জা হয়, তোমার

জন্যে আমি বিব্রত!!!তারপরেও তোমাকে

আমি অনেক অনেক ভালোবাসি, অনেক অনেক

পছন্দ করি আর তাই তোমাকে এই কথাগুলো

বললাম যেন তোমার চেতনা ফিরে আসে, যেন

তোমার ভিতরে ঘুমিয়ে থাকা সত্যিকারের

মানুষটা জেগে ওঠে।

গ) হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুতে, সস্তা প্রেমের

সিনেমা দেখে, সস্তা প্রেমের উপন্যাস পড়ে

তোমার চোখে জল এসে যায় কিন্তু নিজের

শত শত ভুল আর পাপের জন্যে আল্লাহর সামনে

দাড়িয়ে একফোঁটা চোখের জল ফেলার সময়

তোমার হয়না। আর দাঁড়ালেও সে সময় চোখের

সমস্ত জল যেন কর্পূরের মত বাষ্প হয়ে উড়ে

যায়!! এভাবে আর কতদিন বল? এখনি কি

তোমার চেতনা হবে না নাকি আল

কোরআনের ওই আয়াতের মত হবে তোমার

অবস্থাঃ

“ দুনিয়ায় বেশী বেশী এবং একে অপরের

থেকে বেশী পাওয়ার মোহ তোমাদেরকে

গাফলতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এমনকি

তোমরা (এই চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে ) কবর

পর্যন্ত পৌঁছে যাও।”- সুরা আত তাকাসুরঃ

১-২

বল, আর কবে তোমার রবের দিকে

প্রত্যাবর্তন করবে? শেষ বয়সে? কিন্তু তুমি

যে আর এক মুহূর্ত পরে এই পৃথিবীতে বেঁচে

থাকবে এই নিশ্চায়তা তোমাকে কে দিল?

৮) শুরু হোক নতুন জীবন, নতুন অধ্যায়।

অতীতের ভুল ভ্রান্তির জন্যে পরম করুনাময়

আল্লাহর কাছে তওবা করে,ক্ষমা চেয়ে আজ

থেকে শুরু হোক নতুন জীবন। শুরু হোক নতুন করে

চলার পথ, যে পথ শুধুই আলোয় ভরা, যে পথ শুধুই

সাফল্যের, যে পথে ব্যর্থতার কোন হিসেব

নেই, আল কোরআনই হবে যে পথের একমাত্র

আলোকবর্তিকা। আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র

কোরআনে বলেনঃ

“হে ঈমানদারগণ তোমরা সবাই আল্লাহর

নিকট তওবা করো, তাহলেই তোমরা কল্যান

লাভ করতে পারবে।”- সুরা আন নূরঃ ৩১

“হে ঈমানদগন তোমারা আল্লাহর কাছে

খাঁটি মনে তওবা করো।”- সুরা আত

তাহরীমঃ ৮

রাসুল(সাঃ) বলেনঃ

“আল্লাহ তাঁর বান্দার তওবায় সেই ব্যক্তির

চেয়েও বেশি খুশি হন যার খাবার ও পানীয়

সামগ্রী নিয়ে সাওয়ারী উটটি হঠাৎ গভীর

মরুভূমিতে হারিয়ে গেল। অনেক

খোঁজাখুজির পর হতাশ হয়ে লোকটি একটি

গাছের ছায়ায় শুয়ে পড়ল। এরূপ অবস্থায়

হঠাৎ সে উটটিকে নিজের কাছে দাঁড়ানো

দেখতে পেল। সে উটের লাগাম ধরে

আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে বলতে লাগলঃ হে

আল্লাহ্ তুমি আমার বান্দা আর আমি

তোমার প্রভু!! সে অতিশয় আনন্দেই এই ভুল

করে বসল।”- সহীহ আল বুখারী ও সহীহ

মুসলিম।

“আবু হুরাইরা(রাঃ) বর্ণনা করেন আমি

রাসুল(সাঃ) কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর

কসম! আমি একদিনে সত্তর বারের চেয়েও

বেশি তওবা করি এবং আল্লাহর কাছে

ক্ষমা চাই।” -সহীহ আল বুখারী।

৯) শেষ কথাঃএসো আলোর পথে

এই সুন্দর পৃথিবীতে কে একটু সুন্দরভাবে

বাঁচতে না চায়। আমরা সবাই চাই কারো

কাছে হাত না পেতে একটু স্বাবলম্বী হয়ে

বাঁচতে। আমরা সবাই চাই পৃথিবীতে আমাদের

ধন-সম্পদ, প্রভাব-প্রতিপত্তি, মান-সম্মান

থাকুক। তবে মনে রাখতে হবে তা যেন

আখিরাতের সাফল্যের চেয়ে অগ্রাধিকার

দিয়ে, আখিরাতকে বিনষ্ট করে নয়। আর

প্রাণপণ চেষ্টা করলেই কি অঢেল ধন-সম্পদ,

প্রভাব-প্রতিপত্তি, মান-সম্মান অর্জন করা

যায়? আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কোরআনে

বলেনঃ

“ বলোঃ হে আল্লাহ! তুমিই বিশ্বজাহানের

মালিক! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দান করো

এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা

ছিনিয়ে নাও ৷ যাকে ইচ্ছা মর্যাদা ও

ইজ্জত দান করো এবং যাকে ইচ্ছা

লাঞ্জিত ও অপমানিত করো ৷ সমস্ত

কল্যাণ তোমরা হাতেই নিহিত ৷ নিসন্দেহে

তুমি সবকিছুর ওপর শক্তিশালী ও

ক্ষমতাবান।”- সুরা আল ইমরানঃ ২৬

আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে ইসলাম, কোরআন-

হাদিস বুঝার তৌফিক দান করুন। আমীন।

লিখেছেন- Tanvir Ahmad Arjel

About আলোর কাফেলার সঙ্গী

আমি একজন মুবাল্লিগ ... আল্লাহ আমাকে কবুল করুন. আমিন

Posted on জুলাই 24, 2015, in আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার উপায়।, ইসলামী সমাজ গঠন, জীবন সঙ্গী, দারসূল কোরআন, পাশ্চাত্য গনতন্ত্র এবং ইসলামী গনতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য., প্রেম-ভালবাসা love-affair, বিবাহ বিচ্ছেদ, মানুষ সৃষ্টির রহস্য, রাসূলুল্লাহ সাঃ এর আদর্শ, সেক্সুয়াল সতর্ক and tagged , , . Bookmark the permalink. এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান