হায়রে বিয়ে! হায়রে লজ্জা ! ( পর্ব – ৩)

হায়রে বিয়ে! হায়রে লজ্জা ! ( পর্ব – ৩)

image

বিয়ের পরে আজকালকের সমাজে সবচেয়ে
বেশি যে জিনিষটা নিয়ে সমস্যা হয় সেটা হোল
চাকরি। অনেক ছেলেরা নিজের বউয়ের বাহিরে
যাওয়া মেনে নিতে পারেনা, আবার অনেকে বউ
চাকরি করবেনা এটা মেনে নিতে পারেনা। আসলে
এ ব্যাপারে ইসলাম কি বলে? তাত্ত্বিক কথায় না
যেয়ে সহজ ভাষায় বললে বলা যায়,
ইসলাম নারীকে চাকরি করতে বাঁধা ও দেয়না, এবং
বাধ্য করায় ও বিশ্বাসী নয়। নারী যদি নিজের পর্দা
ও শরীয়ত ঠিক রেখে চাকরী করতে পারে
ইসলামের এতে আপত্তি নেই। কিন্ত
এক্ষেত্রে কথা থেকে যায়। ইসলাম নারীর
এতো কঠিন জীবন চায়না। কারন এতে নারীর
শারীরিক ও মানসিক চাপ বাড়ে।
তাই প্রয়োজন ও সুযোগ বুঝে চাকরী করাই
উত্তম। যাই হোক , সেদিকে যাচ্ছিনা আর।
আজকের ঘটনায় চলে যাচ্ছি ।
ঘটনা – ৪
হৃদিতা বাবা মার বড় মেয়ে। পড়ুয়া আর খুব চটপটে
মেয়ে। দেখতে খুব আহামরি সুন্দরী নয়, তবে
স্বাস্থ্য ভালো । ভিকারুন্নিসায় যখন পড়তো তখনি
পরিচয় হয় রিফাতের সাথে। তখন রিফাত তেজগাঁ
কলেজের অনার্সের ছাত্র। দেখতে শুনতে
কোন দিক দিয়েই রিফাত হৃদিতার যোগ্য নয়
হয়তো, কিন্তু প্রতিদিন হৃদিতার জন্য কলেজের
সামনে যেয়ে দাড়িয়ে থাকতো রিফাত। এই জন্য
মায়া থেকেই রিফাত কে ভালোবেসে ফেলে
হৃদিটা।
আর ১০ টা ভালো ছাত্রীর মতোই বাবা মার অতিরিক্ত
যত্ন পেতো সে। তাই কলেজ শেষ হলেই
বাসায় যেতে হতো। ওই বাসায় যাওয়ার পথ টুকু ই
রিফাত হৃদিটার সাথে থাকতো।
এভাবে দেখতে দেখতে হৃদিতার ইন্টার পরীক্ষা
চলে আসলো। রেজাল্ট কিছুটা খারাপ হলো তার। কি
করবে! প্রেমের মরা যে রেজাল্টেই
প্রতীয়মান হয়।
হৃদিতার বাবা প্রচণ্ড বদ রাগী সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।
মেয়েকে আচ্ছা মতো শাসালেন । রিফাত ও
হৃদিতাকে মেডিকেলের জন্য খুব চাপ দিতে
থাকে। মেডিকেলে ভর্তি না হতে পারলে সে
নাকি হৃদিটার সাথে কোন সম্পর্কই রাখবেনা।
আসলে রিফাত একেবারেই অজ পাড়া গায়ের
ছেলে। সে কিছুটা লোভী , এসব ব্যাপারে।
হৃদিতাকে ভালবাসার পিছনে তার অনেক স্বার্থ
আছে। সে স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটলে তার রাগ
পশুত্বকে ও হার মানায়।
অতিরিক্ত মানসিক চাপে হৃদিতা মেডিকেল ও মিস
করলো। ঠাই পেলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ।
রিফাত এতে খুব নারাজ, যদিও রিফাত নিজে পরে
তেজগাঁ কলেজে তবুও হৃদি তা কে সে পাত্তা
দেয়না। কথায় কথায় বকে, আর চাপ দেয় তাকে
ক্লাসে ফাস্ট হতে হবে, আবার মেডিকেলে
পরীক্ষা দিতে হবে। মেডিকেল আর ভার্সিটির পড়া
লিখা একসাথে সামলে দিশেহারা। এছাড়া রিফাত ও
কেমন হয়ে গেছে জানি। হৃদিতা র চেহারা, ফিগার
এসব নিয়ে প্রায় ই উল্টা পাল্টা কথা বলে। কোক
খেতে দেয়না সে হৃদিতা কে।বলে- তোমার বডি
এমনি ই তো কদাকার! এর উপর আরও কোক
খেয়ে মোটা হবে নাকি?
পাশ দিয়ে কোন সুন্দর মেয়ে গেলে রিফাত
পিপাসু নয়নে চেয়ে থাকে। তার হায় আফসোস
হৃদিটা পড়ে ফেলে তার চোখের ভাষায়। আর
মনে মনে ভাবে, ও ভালো না বাসলে আমার যে
কি হতো? বেচারা! আমার মতো অসুন্দর একটা
মেয়েকে ভালো বাসল। থাক ! এসব সহ্য করে
নেই।
দেখতে দেখতে হৃদিতার মেডিকেল পরীক্ষা
চলে আসলো। কিন্তু খুব আশানুরূপ হোল না। ও
দিকে ভার্সিটিতেও যাওয়া হয়না বহুদিন।
মেডিকেলের রেজাল্ট বের হোল। হৃদিটা এবারও
মিস করলো। খবর টা রিফাত কে জানানোর পর সে
তার ফোন কেটে দিলো। হৃদিতা কতো বার কল
করলো। কিন্তু তার যে ধরার নাম নেই!
হৃদিটা ঠিক করলো রিফাতের মেসে যাবে।
মেসের সামনে যেয়ে দাড়িয়ে কল দিলো রিফাত
কে, দোকান থেকে।
এবার শে ফোন ধরল । হৃদিতা বলল- আমি তোমার
বাসার সামনে, প্লিয আমাকে মাফ করে দাও?
– তুই আসছিস ক্যান? তোরে এখানে কে আসতে
বলছে হতচ্ছারি?
– তুমি আমার সাথে এমন করছ কেন? তুই তকারি করছ
কেন?
– তোর মতো *****জাদির সাথে সম্পর্ক না রাখলে
আমার কিচ্ছু যায় আসেনা, মেডিকেলে chance
পাসনি আবার কথা বলতে আসছিস! আমার সাথে দেখা
করতে আসছিস! তোর সাহস তো কম না!
– ঠিক আছে। আমি বাসায় চলে গেলাম। তুমি ভালো
থাকো।
হৃদিতা বাসায় যেয়ে

হাপুস নয়নে কাঁদে । দেওয়ালে
মাথা ঠুকে , যা পায় তাই দিয়ে নিজেকে আঘাত করে
। রিফাতের ব্যাবহার মেনে নিতে পারেনা। অনেক
কষ্টে একটা রাত তার পার হয়।
সকালে ভার্সিটি তে যেয়ে রিক্সা থেকে নামার
সময় দেখে রিফাত দাড়িয়ে আছে। হৃদিতা কথা
বলেনা। খুব রাগ হয় তার। রিফাত বলে -i am sorry,
কাল মেজাজ খারাপ ছিল, তোমাকে কতবার বলেছি
মেজাজ যখন খারাপ থাকে আমার সাথে কথা বলবে
না।
ওদের রাগারাগি ভেঙ্গে যায়। দিন কাটতে থাকে।
একদিন হৃদিতা রিফাতের জন্য পোলাও রান্না করে
আনে। রিফাত খুব রাগ হয়।
– তোমাকে রান্না করতে কে বলছে?
-রান্না না করলে রান্না শিখবো কীভাবে বলো ?
– তুমি কি চুলা ঠেলবা নাকি? তুমি করবা চাকরী ,
তোমাকে রান্না শিখতে হবেনা। ভালো করে
পড়ো । বড় চাকরী করতে হবে তোমাকে।
হৃদিতা মাথা নাড়ে।
অনার্স পাশ করার পর , সে বিভিন্ন যায়গায় চাকরী
খুঁজতে থাকে। রিফাত তার ২ বছর আগেই বের
হলেও এখনো বেকার। একটা টিউশনি ও সে
করেনা। তার হাত খরচ দিতে দিতে হৃদিতার জান
তেজপাতা। রিফাত ইদানিং হৃদটতা র সাথে অমানুষের
মতো আচরণ করে। চাকরী কেন পায়না হৃদিতা এই
তার রাগ।
অবশেষে একটা ব্যাংকে চাকরী পায় সে। বাবা মা
কিছুতেই রিফাত কে মেনে নেয়না। তাই বাধ্য
হয়েই হৃদিতার চলে যেতে হয় রিফাতের সাথে।
রিফাত আর হৃদিতা বিয়ে করে ফেলে।
কয়েকদিন বেশ ভালোই চলছিলো সংসার ওদের।
কিন্তু একজনের সামান্য ইনকামে সংসার চলেনা।
হৃদিতার ও খুব কষ্ট হয়। চাকরী ঘর দুটোই সে
দেখে। আর রিফাত আছে বন্ধু বান্ধব নিয়ে তাস
খেলা ঘোরা ফেরা এসবের তালে। হৃদিতার খুব কষ্ট
লাগে। কিছু বলতেও পারেনা। রিফাত মারতে আসে ।
কোন কোন দিন হাত ও তুলে সে। শুধু শুধু
ভালোবাসার দিকে চেয়ে হৃদিতা আড়াল করে
বুকের দীর্ঘশ্বাস ।
এই সমাজে যেমন চাকরী করা বউ খুঁজা হয় , তেমনি
এর উল্টা টাও কিন্তু করা হয়।কিন্তু ব্যাপার হোল যে
২ টাই অতিরিক্ত পর্যায়ে চলে যায়। কারো চাকরী
করা দরকার ও হতে পারে, সেক্ষেত্রে মানা যায়।
কিন্তু যখন একজন নারী সংসারের সমস্ত কাজের
সাথে অর্থনৈতিক দ্বায় দায়িত্ব ও একা নিজের কাঁধে
তুলে নেয়, ব্যাপারটা তার জন্য অমানুষিক হয়ে যায়।
নারীকে ইসলাম বাধ্য করেনি বাহিরে উপার্জনের
জন্য। এই দায়িত্ব পুরোটাই পুরুষের । এর
জবাবদিহিতাও পুরুষকেই করতে হবে। এ ক্ষেত্রে
কোনমতেই বউকে force করা যাবেনা যে ,
তাকে চাকরী করতেই হবে।
তবে ইদানিং কিছু লোভী মানুষ বিয়ে করার সময়
বেছে বেছে ভালো চাকুরীজীবী
মেয়েদের বিয়ে করতে চায়। এই নজীর ও
সমাজে কম নয়। এক আপুকে চিনি, যিনি ডক্টর ,
আমেরিকায় থাকেন, ভালো চাকরী করেন, কিন্তু
বাবার বাড়িতে এক টাকা ও পাঠাতে পারেন না, কেননা,
ওনার স্বামী ওনার বেতন পাওয়ার সাথে সাথে পাই
পাই হিসাব করে ফেলেন, এবং নিজের কুক্ষিগত
করে ফেলেন। এটা নিশ্চয়ই নারী স্বাধীনতা নয়
তাইনা?
ইসলাম নারীকে নিজের উপার্জিত অর্থের
ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। আর এছাড়া
লোভ লালসার বশবর্তী হয়ে যেসব বৈবাহিক
সম্পর্ক গড়ে ওঠে, কেন জানি সেসব সম্পর্কে
কিছু না কিছু ছন্দ পতন দেখাই যায়। ছেলেদের
অবশ্যই এই নিয়তে বিয়ে করা উচিৎ নয় যে তার
জীবন সঙ্গিনী সংসার ও বাহির ২ টাই সামলাবে ।
তবে এর বিপরীত চিত্র ও আছে, পরের পর্বে
বলবো ইনশাল্লাহ । আল্লাহ আমাদের এই ধরনের
লোভকাতরতার সম্পর্ক থেকে রক্ষা করুন।
courtesy : সাফওয়ানা জেরিন

About আলোর কাফেলার সঙ্গী

আমি একজন মুবাল্লিগ ... আল্লাহ আমাকে কবুল করুন. আমিন

Posted on নভেম্বর 20, 2015, in আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার উপায়।, দাম্পত্য জীবনের সমস্যা এবং সামাধান, পুরুষের বিপদ., রেহনুমা বিনত আনিস, হায়রে বিয়ে! হায়রে লজ্জা !. Bookmark the permalink. এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান