দাম্পত্য সমস্যা – mother-in-law phobia – শাশুড়ি ভীতি

image

মেয়েরা সাধারনত সবচেয়ে বেশী যে বিষয়ে গীবত করে সেটা হল শাশুড়ি এবং শ্বশুর বাড়ি। এটা ফ্যাক্ট যা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। এটা যে শুধু উপমহাদেশের মেয়েদের মধ্যে বেশী তা কিন্তু নয়; বরং এটি একটি গ্লোবাল ব্যপার। ইদানীং ফেইসবুক এই গীবতের একটা চমৎকার মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। কিছু কিছু মেয়ে তো রীতিমত ‘mother-in-law phobia’ তে ভুগেন এবং তার আশেপাশের লোকজন এই ফোবিয়াকে ডিজেল/পেট্রোল ঢেলে আরও বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে কোন রকম কারন ছাড়াই তারা বিয়ের পরের দিন থেকেই তার স্বামীর বাড়ির সবাইকে এবং বিশেষ করে শাশুড়িকে তার প্রতিপক্ষ মনে করেন। আমি একজনকে জানতাম, তাকে কেউ ঘটকালী করতে বললে তিনি ইয়াতিম ছেলে খুঁজতেন, এই ভেবে যে মেয়ের শাশুড়ি ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন থাকবে না!

নিজের মা যে কথাটা বললে হয়ত সে মোটেই আমলে আনতো না, সেই একই কথা শাশুড়ি বললে সে আকাশ-পাতাল (বর্তমানে ফেইসবুক) একাকার করে ফেলে। অনেকেই হয়ত বলবেন, সমস্যাটা ভাইস ভার্সা। সত্যিকথা বলতে কি, আমি কিন্তু আমার আশেপাশে গীবতকারী বউদেরই বেশী দেখি, শাশুড়ি দেখি না বললেই চলে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যদি শাশুড়ির সাথে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলা যায় তাহলে সব দিক দিয়ে বউ- ই লাভবান হন। আবার কেউ বলবেন, “শাশুড়ি তো রক্তের সম্পর্কের কেউ না। মায়ের সাথে তো নাড়ির সম্পর্ক”। একজ্যাক্টলি! নাড়ির সম্পর্কের মা কি আপনাকে কখনো খারাপ কথা বলেন নি? অন্যায় আচরণ করেন নি? “রক্তের সম্পর্ক নাই তাই আপন করে নেয়া যায় না”। সেই জন্যই তো ব্যবহারটাকে সুন্দর করতে হবে। কাউকে যদি প্রথম থেকেই প্রতিপক্ষ মনে করা হয় তাহলে কিভাবে সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে? ব্যবহারের সম্পর্ক একবার মজবুত হলে অনেক সময় রক্তের সম্পর্ককেও হার মানায়। তার সবচেয়ে বড় উদাহরন হল স্বামীস্ত্রীর সম্পর্ক।
যদি আপনার শাশুড়ির কথায় আপনি দুঃখ পান তাহলে তার সাথে ভদ্রভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করুন, তাকে আপনার কষ্টটি খুলে বলুন। আর সেটা একেবারেই সম্ভব না হলে, উনার ছেলেকে হিকমাহের সাথে বলুন। ভালবাসা পেতে চাইলে ভালবাসা দিতে হয়। শাশুড়িকে প্রতিপক্ষ মনে না করে বরং নিজের মায়ের মত মনে করুন। তার সাথে সুখদুঃখের কথা বলুন। দেখবেন, সে আপনার সবচেয়ে ভালো বন্ধু হয়ে যাবে। একবার চেষ্টা করে দেখেন না, ক্ষতি তো নাই। আপনার বয়স বিশ/বাইশ হতে পারে (তবে যাদের গীবত করার অভ্যাস, সে পঞ্চাশেও গীবত করা ছাড়েন না!)। কিন্তু আপনি বিবাহিত একজন মেয়ে। এমনকি বাচ্চার মা হয়েছেন বা হবেন। এতটুকু ম্যাচুরিটি তো আপনার কাছে আশা করা যায়, তাই না? বাইরের লোকের কাছে শাশুড়ি এবং শ্বশুর বাড়ি গীবত করে কেন নিজের পাপের বোঝা বাড়াচ্ছেন? আপনি যেভাবে তাদের সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলে বেড়ান ঠিক সেইভাবে কি নিজের মা বা বোনের কথা আপনার বান্ধবীকে/প্রতিবেশীকে/ফেইসবুকে সারা দুনিয়াকে বলেন?
আপনাকে মনে রাখতে হবে, আজ আপনি যে স্বামীকে নিয়ে গর্বিত তার জন্মদাত্রী হচ্ছেন আপনার শাশুড়ি। আপনার স্বামীর যতগুলো ভালো গুন রয়েছে, তার হাতেখড়ি হয়েছে এই মায়ের হাতে। আজ আপনি ডাক্তার/ ইঞ্জিনিয়ার/ ব্যারিস্টার/ বিসিএস ক্যাডার/ লইয়ার/প্রফেসার/ ইউনিভার্সিটি গ্র্যাজুয়েট/ব্যবসায়ী এর স্ত্রী হিসাবে যে আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদা ভোগ করছেন, তার পেছনে রয়েছে এই মায়ের অনেক নির্ঘুম রাত, বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা, অনেক স্বপ্ন। আপনি যদি মা হন, তাহলে আপনার সন্তান দূরে সরে গেলে বা চোখের আড়াল হলে আপনার বুকের ভেতর যেমন দলা পাকিয়ে কষ্টভাব হয়, উনিও ঠিক তেমনি বোধ করেন যখন আপনার কূটচালের ফলে উনার ছেলে দূরে চলে যায়। এখন যে ‘হাবির জন্য পুডিং বানালাম — ফিলিং ওয়ান্ডারফুল’ লিখে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে পুডিং এর রেসিপি শেয়ার করেন। এই ‘হাবিকে’ ভ্যাক্সিন দিয়ে আনার পর যখন সারারাত ট্যাঁ ট্যাঁ করে কেঁদেছিল, তখন তার মা -ই তাকে নিয়ে রাতভর বারান্দায় হেটে বেড়িয়েছিলেন। আপনি সম্ভবত তখন আল্লাহ্‌র কাছে ছিলেন! আজকে অতি সামান্য কারণে বা কোন কারণ ছাড়াই আপনি আপনার ‘প্রভাব’ খাটিয়ে অন্যায়ভাবে একটা ছেলেকে তার মায়ের থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছেন, মায়ের প্রতি সন্তানের কর্তব্যে বাধা দিচ্ছেন। একটা দৃশ্য কল্পনা করেন, আপনার কোলের ছোট্ট ছেলেটা যার প্রতিটা অঙ্গভঙ্গির ছবি আপনি আজকে ফেইসবুকে শেয়ার করে আনন্দে আত্মহারা হন। আজকে থেকে নিয়ে পঁচিশ/ত্রিশ বছর পর সেই ছেলের বউ আপনাকে তার কাছেও আসতে দিবে না! কেমন লাগবে আপনার?
আপনি যদি মুসলিম হন তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে “your husband’s Jannah lies under her feet, not your feet”! So stay in your limit!!

মূল লেখা – সিফাত  মেহজাবিন

About আলোর কাফেলার সঙ্গী

আমি একজন মুবাল্লিগ ... আল্লাহ আমাকে কবুল করুন. আমিন

Posted on ফেব্রুয়ারি 19, 2016, in দাম্পত্য জীবনের সমস্যা এবং সামাধান, প্রেম-ভালবাসা love-affair, যৌবন কাল, রেহনুমা বিনত আনিস and tagged , . Bookmark the permalink. এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান