বাবার কাছে বিবাহযোগ্য মেয়ের চিঠি।

বাবার কাছে বিবাহযোগ্য মেয়ের চিঠি।

image

প্রিয় বাবা,
যদিও তুমি অনেক কাছেই আছো, তবুও কিছু কথা
তোমাকে কিছুতেই মুখে বলতে পারছিনা। কিছুটা
সামাজিক আচারের প্রতি নিষ্ঠা, আবার কিছুটা জড়তা এবং
তোমার উত্তপ্ত চাহনি বিনিময়ের ভয়েই লেখার
আশ্রয় নিচ্ছি।
কারন, উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে আর যাই হোক কোন
গঠনমূলক আলোচনা হতে পারেনা।
বুঝলে বাবা! পৃথিবীর বেশীরভাগ মানুষই মনে হয়
দ্বিচারী মানসিকতার!
তুমি আমি আর আমাদের মতো সাধারণ মানুষরা এই
অভ্যাস কিংবা স্বভাব থেকে কিছুতেই বের হতে
পারছি না।
বাবা হিসেবেই আমার যে কাজটা তুমি মেয়ে
হিসেবে সমর্থন করো নি, ছেলের জন্য সেই
একই কাজকে দ্বিগুণ উৎসাহে করার উপদেশ দিয়েছ
সবসময়।
যাই হোক! কিন্তু আজ জীবনের একটা বড় বাঁকে
এসেও তুমি সেই কাজই করছ।
তোমার মনে আছে কি? ভাইয়ার যখন বিয়ের কথা
চলছিলো তখন এই তুমিই বাসার সমস্ত হাদিস বই নামিয়ে
হারিকেন জ্বেলে খুঁজছিলে মোহরানা যেন
মাত্রাতিরিক্ত বা বোঝা হয়ে না দাড়ায় সেই সংক্রান্ত
বিধি বিধান। এবং পেয়েও গিয়েছিলে । যেদিন লতা
ভাবির বাসায় এই সংক্রান্ত আলাপে গিয়েছিলে সেদিন
হাদিস বইটিও সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলে, যেন
তোমার ছেলেকে মেয়ে পক্ষ মোহরানার
চাপে পিষ্ট করে ফেলতে না পারে, তার একটা
আদর্শিক ভিত্তি দাড় করাতে পারো।
আর আজ সেই তুমিই যখন মেয়ের বাবা, তখন তুমিই
বলছ- যে লাখ লাখ টাকা কাবিন ধরতে হবে, নাহয়
আমার বিয়ে যে টিকবে, এই ছেলেটা যে
আমাকে ছেড়ে যাবে না, তার কি নিশ্চয়তা থাকবে!
আবার উদাহরণ ও টেনে দিলে দারুণ। রুনু খালার ২৫
লাখ টাকা কাবিন ছিল, তাই ডিভোর্সের সময় বর বাধ্য
হয়ে তা পরিশোধ করেছিলো। শমি কায়সারের কথা
বলতেও তুমি ভুলো নি।
আচ্ছা বাবা! যেই ছেলের উপর তোমার এতোটুকু
আস্থা নেই যে সে তোমার মেয়েকে ভালো
রাখবে, যার চরিত্রের উপর তোমার এতোটুকু
বিশ্বাস নেই যে সে অন্য কোন মেয়ের দিকে
চোখ তুলে তাকাবে না, তার কাছে তোমার
আদরের কন্যাকে সমর্পণের চিন্তাই বা কি করে
করো?
আর হাদিসেই তো আছে যে সৎ যুবক পেলে
তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিও না।
তাকে কি তোমার যথেষ্ট সৎ মনে হয়েছে?
যদি হয়ে থাকে তাহলে অকারণে ভবিষ্যৎ নিয়ে
দুশ্চিন্তা করে কি লাভ? ভাগ্য বলতেও একটা কথা
আছে। যদি ভাগ্য খারাপ হয়, কোটি টাকা কাবিন করেও
তুমি আমার সংসার টিকাতে পারবে না।
আর গড়ার আগেই ভাঙার কথা যখন ভাবছ, তখন
আসলেই এই সম্পর্কের ভিত্তির মজবুতি নিয়ে সংশয়
দেখা দিচ্ছে।
বাবা, আদর্শ একটা প্যারামিটার। আর আমাদের এই
প্যারামিটার হওয়া উচিৎ আমাদের জীবন বিধান। এখানে
সবকিছুর মানদণ্ড ঠিক করে দেওয়া আছে। তুমি যখন
ছেলের বাবা তখন তুমি অপরের মেয়ের অধিকার
খর্ব করে এটা কখনোই আশা করতে পারো না
যে তোমার মেয়ের প্রতিও আরেক ছেলের
বাবা সদাচারন করবে।
আর মুসলিম তো ভাই, এক দেহের মতো। তুমি
আরেকজনের মেয়ের জন্য ও তাই পছন্দ
করবে, যা নিজের মেয়ের জন্য করো। যে
হাদিস অপরের মেয়ের জন্য প্রযোজ্য তা কি
তোমার নিজের মেয়ের জন্যই অযৌক্তিক ভাবছ?
তাহলে বলতে হয়- আমরা ভীষণ সুবিধাবাদী,
ভোগবাদী, এবং স্বার্থবাদী। নচেত, এই দ্বিমুখী
চরিত্র কপটতা ছাড়া আর কি!
যে ছেলেটির উপর তোমার যথার্থই বিশ্বাস
আছে, যে হ্যা, আমার আদরের কন্যাটির মেধা ও
মননের সবেচেয়ে বেশী মূল্যায়ন সেই
করতে পারবে, তাকেই বেছে নাও না আজ আমার
জন্য।
আর মূল্যায়নের জন্য সবসময় কাড়ি কাড়ি টাকার দরকার
হয়না। দরকার হয় সুন্দর একটা মনের। রুনু খালার জামাই
যে এক লাখ টাকা বেতন পেতো, খালা যে তার এক
টাকার মালিক পর্যন্ত ছিল না তা নিশ্চয়ই জানো? শুধু টাকা
থাকলেই মানুষ মানুষকে মূল্যায়ন করতে সমর্থ হয়না
বাবা। মানুষকে সম্মান করতে হলে চাই একটা সুন্দর
মন।
ভাবছ, এখন থেকেই হবু স্বামীর স্বার্থ দেখা শুরু
করেছি? বলবে আমি এখনই পর হয়ে গেছি? এটা
জানো কি! যে মানুষটা আমাকে ভালো ও বাসবে না,
আবার অতিরিক্ত মোহরানার ভয়ে তালাক ও দিতে
পারবেনা, দিনের পর দিন অত্যাচার করবে, তার
সাথেই সামান্য টাকার জন্য আমি চার দেয়াল আঁকড়ে
পরে থাকি, এই কি চাও?
তবে তাই বলে ভেবো না নিজের সম্মান আর
প্রাপ্যটুকু আমি বুঝে নিবো না। তবে সেটা অবশ্যই
আমাদের আদর্শের প্যারামিটার অনুযায়ীই ঠিক
করতে হবে। জীবন বিধানের কিছু অংশ মেনে
কিছু অংশকে অগ্রাহ্য করে আর যাই হোক, একটা
পবিত্র জীবন শুরু করার কথা আমি ভাবতেও পারছি না।
আর ২০ লাখ ১০ লাখ ধরে বাকির খাতায় শূন্য আঁকার
ইচ্ছাটাও তোমার মেয়ের নেই। আমরা যেন
কপটতা থেকে বের হয়ে শুদ্ধ মানুষ হতে পারি।
আজ রাখছি।
ইতি
তোমার আদরের দুলালী
লিখেছেন- শেখ সাফওয়ানা জেরিন

About আলোর কাফেলার সঙ্গী

আমি একজন মুবাল্লিগ ... আল্লাহ আমাকে কবুল করুন. আমিন

Posted on নভেম্বর 29, 2015, in আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার উপায়।, ইমান ও আকিদাহ, ইসলামে পর্দা নারী ও পুরুষের, তারুন্যের চিন্তা ভাব, পাশ্চাত্য গনতন্ত্র এবং ইসলামী গনতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য., প্রেম-ভালবাসা love-affair, বিবাহের প্রয়োজনীয়তা, porngraphic. Bookmark the permalink. এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান