ইসলামে মা -বাবার মর্যাদা।

ইসলামে বাবা-মায়ের মর্যাদা।

image

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়,
অতি দয়ালু।
ﻗُﻞْ ﺗَﻌَﺎﻟَﻮْﺍْ ﺃَﺗْﻞُ ﻣَﺎ ﺣَﺮَّﻡَ ﺭَﺑُّﻜُﻢْ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺃَﻻَّ ﺗُﺸْﺮِﻛُﻮﺍْ ﺑِﻪِ ﺷَﻴْﺌًﺎ
ﻭَﺑِﺎﻟْﻮَﺍﻟِﺪَﻳْﻦِ ﺇِﺣْﺴَﺎﻧًﺎ ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮﺍْ ﺃَﻭْﻻَﺩَﻛُﻢ ﻣِّﻦْ ﺇﻣْﻼَﻕٍ ﻧَّﺤْﻦُ
ﻧَﺮْﺯُﻗُﻜُﻢْ ﻭَﺇِﻳَّﺎﻫُﻢْ ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﺮَﺑُﻮﺍْ ﺍﻟْﻔَﻮَﺍﺣِﺶَ ﻣَﺎ ﻇَﻬَﺮَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻭَﻣَﺎ
ﺑَﻄَﻦَ ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮﺍْ ﺍﻟﻨَّﻔْﺲَ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﺣَﺮَّﻡَ ﺍﻟﻠّﻪُ ﺇِﻻَّ ﺑِﺎﻟْﺤَﻖِّ ﺫَﻟِﻜُﻢْ
ﻭَﺻَّﺎﻛُﻢْ ﺑِﻪِ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗَﻌْﻘِﻠُﻮﻥَ
বাংলা ভাবার্থঃ “আপনি বলুনঃ এস, আমি
তোমাদেরকে ঐসব বিষয় পাঠ করে শুনাই,
যেগুলো তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের
জন্যে হারাম করেছেন। তা এই যে, আল্লাহর
সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করো না,
পিতা-মাতার সাথে সদয় ব্যবহার করো,
স্বীয় সন্তানদেরকে দারিদ্রের কারণে হত্যা
করো না, আমি তোমাদেরকে ও তাদেরকে
আহার দেই, নির্লজ্জতার কাছেও যেয়ো না,
প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য, যাকে
হত্যা করা আল্লাহ হারাম করেছেন, তাকে
হত্যা করো না; কিন্তু ন্যায়ভাবে।
তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন
তোমরা বুঝ”। [৬:১৫১]
English Translation: “Say, “Come, I will recite
what your Lord has prohibited to you. [He
commands] that you not associate anything with
Him, and to parents, good treatment, and do not
kill your children out of poverty; We will provide
for you and them. And do not approach
immoralities – what is apparent of them and what
is concealed. And do not kill the soul which
Allah has forbidden [to be killed] except by
[legal] right. This has He instructed you that you
may use reason.” [6:151]
সুরা আল আন’আম এর একটি আয়াত নেয়া
হয়েছে, এটি কুরআনের অষ্টম পারার অংশ। এই
আয়াতের একটি ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে আলোচনা
করবো যেখানে বাবা-মায়ের সম্পর্কে বলা
হয়েছে। কুরআনের অন্যান্য সুরার (সুরা ইসরা,
সুরা লুকমান ইত্যাদি) বিভিন্ন আয়াতে
ইসলামে বাবা-মায়ের মর্যাদা, তাদের প্রতি
সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে অনেক
বিশদভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে
একটি বিশেষ কারণে আলচ্য আয়াতের ক্ষুদ্র
অংশটি অন্য নির্দেশগুলোর থেকে ভিন্ন।
আয়াতটি শুরু হয়েছে এমনভাবে যেখানে
আল্লাহ্তালা রাসুল(সা) কে বলছেন “আপনি
বলুনঃ এস, আমি তোমাদের শুনাই তোমাদের
রব তোমাদের ওপর কি বিধি-নিষেধ আরোপ
করেছেন”।
আসুন আমরা দ্রুত দেখে নেই এই আয়াতে কোন
কাজগুলো আল্লাহ্ আজওয়াজাল আমাদের
জন্য নিষেধ করেছেন।
(১) আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না।
(২) দারিদ্রের ভয়ে নিজের সন্তানদেরকে
হত্যা করো না, আমি তোমাদেরকে জীবিকা
দিচ্ছি এবং তাদেরকেও দেবো।
(৩) প্রকাশ্যে বা গোপনে অশ্লীল বিষয়ের
ধারে কাছেও যাবে না।
(৪) আল্লাহ যে প্রাণকে মর্যাদা দান
করেছেন ন্যায় সঙ্গতভাবে ছাড়া তাকে
ধ্বংস করো না।
এখানে ইসলামের চারটি প্রধান হারাম
কাজকে উল্লেখ করা হয়েছে যা একজন
মুসলিম কোনভাবেই করবে না। আয়াতের
শেষে বলা হয়েছে, “তিনি তোমাদের এ
বিষয়গুলোর নির্দেশ দিয়েছেন, সম্ভবত
তোমরা ভেবে-চিন্তে কাজ করবে”। যে
আয়াতে হারাম কাজগুলোর বর্ণনা দিয়ে
করতে নিষেধ করা হয়েছে সেখানে খুব
আশ্চর্যজনক ভাবেই একটা নির্দেশ দেয়া
হয়েছে যা অবশ্যই করতে হবে! সেই
নির্দেশটি হচ্ছে, “পিতামাতার সাথে
সদ্ব্যবহার করো”। এই আয়াতের প্রত্যেকটি
পয়েন্ট একজন মুসলিমের জন্য নিষেধ বা
বারণ। এতোগুলো ‘করো না’ এর ভেতর শুধু
একটা পয়েন্ট হচ্ছে ‘করো’!
Rhetorically এই নির্দেশটি অত্যন্ত
শক্তিশালী আদেশ, কারণ এখানে আল্লাহ্
বলছেন, বাবামার জন্য সর্বোত্তম ব্যবহারের
কম কিছুই করবে না। ইসলামে অন্যান্য
বিধানগুলোর ক্ষেত্রে এমন কোন আদেশ নেই,
যেটি সর্বোত্তম না হলে আল্লাহ্র কাছে
গ্রহনযোগ্য হবে না বা শ্রেষ্ঠ থেকে সামান্য
কিছু কম হলে গুনাহ হিসাবে ধরে নেয়া হবে।
একটিমাত্র ব্যতিক্রম হচ্ছে, বাবা-মা।
আল্লাহ্ এই কথা বলেননি যে ‘তোমাদের
আল্লাহ্র প্রতি ইহসান থাকতে হবে, না
থাকলে সেটা হারাম’। এই আয়াতের বাকী
সবগুলো নির্দেশ হারাম সংক্তান্ত, এমন
একটি আয়াতের মাঝখানে আল্লাহ্ বলেছেন,
“ওয়া বিল ওয়া-লিদাইনি ইহসা-নান”।
বাবামা উভয়ের সাথে সর্বোত্তম ব্যবহার
করতে হবে। তাদের সাথে ‘ইহসান’ করতে হবে,
সেটা যে কোন পরিস্থিতিতেই হোক না
কেন। সবচেয়ে ভালো থেকে একচুল কম হলে
সেটা আল্লাহ্র কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না,
বরং গুরুতর গুনাহ হিসাবে বিবেচিত হবে।
সালাত আদায় করার পদ্ধতি যদি শতকরা
একশত ভাগ সঠিক না হয়, তাহলে
প্রায়োগিকভাবে কোন মুসলিম পাপ করছে
এই কথা বলা হয় নি।

মানুষের সাথে আচরণ
যদি একশত ভাগ ঠিক না হয়, তাহলেও
প্রায়োগিকভাবে হারাম করছে বলা যাবে
না। তাকে সংশোধনের জন্য, সঠিক পন্থা
অবলম্বন করার জন্য পরামর্শ দেয়া যাবে।
কিন্তু যখন বাবামায়ের প্রতি সদ্ব্যবহারের
প্রসঙ্গ আসবে, আমাদেরকে অবশ্য অবশ্যই
সর্বোত্তম হতে হবে। এই ক্ষেত্রে উনিশ-বিশ
হলে সেটা গুনাহ হিসাবে গন্য করা হবে।
আল্লাহ্তালা এখানে নির্দিষ্ট করে উল্লেখ
করেন নি, যেমনঃ সর্বোত্তম আদব বা
সর্বোত্তম সহিষ্ণুতা কিম্বা সর্বোত্তম
আনুগত্য অথবা সর্বোত্তম উপহার। বরং
বলেছেন যখন বাবামায়ের প্রতি
সদ্ব্যবহারের প্রসঙ্গ আসবে তখন সেটা হতে
হবে সর্বোত্তম! আদব, আচার-আচরণ,
বাচনভঙ্গি, সম্মান, সহিষ্ণুতা, আনুগত্য, চিন্তা,
সন্তুষ্টি বিধান, উপহার, সময়, সেবা ইত্যাদি
সবকিছুই সদ্ব্যবহারের অন্তর্ভুক্ত। এই
আদেশটির ভঙ্গিটা অনেকটা এইরকম যখন
আমরা বাচ্চাদেরকে কোন কাজ করার সময়
বলি, “এটা কর, ব্যাস, আর কোন কথা না”। ঠিক
একই ভঙ্গিতে আল্লাহতালা আমাদেরকে
বলেছেন, যখন বাবামায়ের প্রতি
সদ্ব্যবহারের প্রসঙ্গ আসবে তখন সেটা হতে
হবে সর্বোত্তম, ব্যাস আর কোন কথা না!
এখানে তর্কবিতর্কের কোন সুযোগই রাখা
হয়নি। তাই ‘আমার ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র, আমার
বাবামা খারাপ’ অথবা ‘আমার বাবা বদরাগী,
আমি তাকে দেখতে পারি না’ বা ‘আমার মা
আমাকে বোঝে না, আমি তাকে ঘৃণা করি’ –
এই ধরনের অজুহাতের কোন অবকাশ নেই।
“ওয়া বিল ওয়া-লিদাইনি ইহসা-নান”—আর
কোন কথা না!
কুরআনের সর্বত্র বাবামায়ের অধিকারকে
তাওহীদের বিধানের পরপরই বর্ণনা করা
হয়েছে। একথা সুস্পষ্ট যে, আল্লাহর পর
বান্দার অধিকারের দিক দিয়ে মানুষের ওপর
তার বাবামার অধিকার সর্বাগ্রগণ্য।
আমাদের সবাইকে আল্লাহ্ আজওয়াজাল এই
অসামান্য মান বজায় রেখে বাবামায়ের
প্রতি সদ্ব্যবহারের করার মত শারীরিক ও
মানসিক সামর্থ্য দিক। একই সাথে সহিষ্ণুতা
দান করুক, বিশেষ করে যখন তারা (বাবা-মা)
রেগে গিয়ে, অবুঝ হয়ে মাঝে মাঝে অনুচিত
বা বেমানান জিনিস আশা করে বা দাবী
করে বসে। কখনো কখনো শরিয়তের বাইরে বা
ইসলাম বহির্ভূত কোন কাজ করতে আবদার
করে বা চাপ দেয়। এই ধরনের পরিস্থিতি
মোকাবেলা করার জন্য আল্লাহ্র তরফ থেকে
হিকমাহ, সাহস ও সহিষ্ণুতা প্রার্থনা করি।
আল্লাহতালা আমাদের সবার বাবামা-দের
সকল অপরাধ ক্ষমা করে দিক।
[নোমান আলী খানের কুরানিক জেমস
(Quranic Gems) সিরিজের অষ্টম পর্বের
বাংলা ভাবার্থ। দ্রুত অনুবাদ করার কারনে
কিছু ভুল-ত্রুটি থাকাটাই স্বাভাবিক। আমার
এই অনিচ্ছাকৃত ভুল আশাকরি ক্ষমাসুন্দর
দৃষ্টিতে দেখবেন। যা কিছু কল্যাণকর তার
সম্পূর্ণই আল্লাহ্র তরফ থেকে, আর যা কিছু
ভুল সেটি সম্পূর্ণ আমার। আল্লাহ্ রাব্বুল
আলামিন আমার সেই ভুলগুলো মার্জনা করুন।
তিনি পরম ক্ষমাশীল, অসীম দয়ালু।
আল্লাহ্তালা আমাদের সকলকে কুরআনের
আয়াতসমূহ বুঝে পড়ার তৌফিক দান করুন এবং
সঠিক মর্মার্থ বুঝে সেই ভাবে জীবনকে
পরিচালিত করার মত হিকমাহ, সাহস ও ধৈর্য
দিক।]
(To watch the video go to: https://
http://www.youtube.com/watch?v=6NFo35g7zo8 )
courtesy : Sefat Mahjabeen

About আলোর কাফেলার সঙ্গী

আমি একজন মুবাল্লিগ ... আল্লাহ আমাকে কবুল করুন. আমিন

Posted on নভেম্বর 21, 2015, in আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার উপায়।, দাম্পত্য জীবনের সমস্যা এবং সামাধান, পিতা - মাতার অধিকার, পুরুষের বিপদ., রেহনুমা বিনত আনিস. Bookmark the permalink. এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান