Category Archives: হায়রে বিয়ে! হায়রে লজ্জা !

হায়রে বিয়ে! হায়রে লজ্জা! – ( শেষ পর্ব)

হায়রে বিয়ে! হায়রে লজ্জা! – ( শেষ পর্ব)

image

টম অ্যান্ড জেরির খুব জনপ্রিয় একটি পর্ব আছে , I
am ugly.
কার্টুন টা আমার খুব প্রিয়। আধা ঘণ্টার একটা কার্টুন।
এটায় সেই পিচ্চি লুতুপুতু হলুদ হাঁসখানা আছে, যে
নিজেকে অসুন্দর ভাবে এবং মনের দুঃখে বারবার
টমের কাছে নিজেকে সঁপে দেয় যাতে টম
তাকে খেয়ে ফেলে। সে আর বাঁচতে চায়না,
কিন্তু বিপত্তি ঘটায় জেরি। সে বারবার তাকে বাঁচায় এবং
নানা ভাবে তাকে সাজিয়ে দেখায় যে তাকে সুন্দর
লাগছে। কিন্তু এতে তার মন গলেনা , সে তবুও
নিজেকে অসুন্দর মনে করে ।সে বারবার
আত্মহত্যা করতে চায়। অবশেষে এই হাঁসকুলেরই
একজন রমণী কে দেখে সে নিজে কতোটা
সুন্দর বুঝতে পারে, এবং ২ জন একসাথে মিলে যায়।
এই কার্টুন টা আসলে শিখায় , নিজেকে নিজের
কাছে সব সময় ই অসুন্দর মনে হয় , কিন্তু নিজের
প্রকৃত গুরুত্ব ও মর্যাদা তখনি বুঝা যায় যখন তার সাথে
মানসিকতা আর সব কিছুর মিল আছে এমন কেউ
সঙ্গী হয়। তাই তো ইসলামে জীবনসঙ্গীকে
একে অপরের লেবাস হিসেবে আখ্যা দেওয়া
হয়েছে। এই লেবাসের মাপ টা হওয়া চাই একি রকম ,
এতে মানসিকতা , সামাজিক অবস্থান , আদর্শগত
বিশ্বাসের যদি গড়মিল হয়ে যায় তাহলে মাপটাও যেমন
বড় ছোট হয়ে যায় , ঠিক তেমনি জীবন চলার
পথে ২ জন ২জনের সহমর্মী , সহকর্মী হওয়াটা
খুব কঠিন হয়ে যায়।
কখনো কখনো জীবন বিধান ও আদর্শকে ২
জন মানুষ ২ দৃষ্টিতে দেখে। কারো কাছে যেটা
স্বাভাবিক অপরের কাছে তাই হয়ে যায় অস্বাভাবিক ।
বিয়ের আগে ও পরে ছেলে মেয়ের মাঝে
যেসব জিনিষ নিয়ে মনোমালিন্য হয় তার বড় একটি
অধ্যায় জুড়ে আছে বউ কি চাকরী করবে নাকি
করবেনা!
এক্ষেত্রে সমাজে ২ রকম চিত্র দেখা যায়
১- চাকরী বাধ্যতামূলক করতেই হবে
২- যতো মেধা বা যোগ্যতা বা দরকারই থাকনা কেন
চাকরী করা যাবেনা।
এসব বিষয় নিয়ে তর্কে বিতর্কে বহু বিয়ে হওয়ার
আগেই ভেঙ্গে যেতে দেখেছি, আবার
অনেকেই বিয়ের পর ও এসব মনোমালিন্য নিয়ে
একই ছাদের নিচে অসন্তুষ্ট হয়ে জীবন কাটিয়ে
দিচ্ছে।
ঘটনা – ৬
তানিয়া জীবনের প্রতি কিছুটা ত্যাক্ত হয়ে গেছে।
কম বয়সে ডাক্তারি পড়ুয়া পাত্র পেয়ে বাবা মা বিয়ে
দিয়ে দিলো। কিন্তু তানিয়া তখন সবে মাত্র উচ্চ
মাধ্যমিকের ছাত্রী । তার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার
ইচ্ছা। আর মুসা ও তখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি বলে সংসার
পরে করা হবে বলে তানিয়া বাবার বাড়ি ই রয়ে
গেলো।
তানিয়া ভালো ছাত্রী, তাই জীবনে কিছু করার খুব
আগ্রহ তার। ভর্তি হোল গণযোগাযোগ ও
সাংবাদিকতায়। ওদিকে মুসা ও বেশ ভালো ভাবে
ডাক্তারি পড়তে লাগলো। দিন গুলো ভালোই কাটছিল
ওদের। সংসারের তাড়না নেই, কিন্তু ২ জন ২ জনের
ভালো বন্ধু হয়ে পথ চলা। কিন্তু বাঁধ সাধল মুসার হটাত
আকস্মিক পরিবর্তন ।
আচমকা একদিন জীবন সম্পর্কে তার দৃষ্টি ভঙ্গি
বদলে গেলো। তানিয়ার পড়ালেখা তার অর্থহীন
মনে হতে লাগলো । মেয়ে মানুষ এতো পড়ে
কি করবে? তানিয়ার আবার নিজেকে নিয়ে খুব আশা
সে ভালো কলামিস্ট হবে, তার পড়ালেখা ধ্যান ধারনাই
যে এসব নিয়ে! কিন্তু মুসা অন্য জগতের মানুষ।
দেশের পরিস্থিতি , রাজনৈতিক অবস্থা কিছুই যে
তাকে আকৃষ্ট করেনা। সে শুধু ৫ ওয়াক্ত নামাজ ঠিক
মতো পড়তে পারলেই খুশি। যখন তানিয়া সমাজের
দুঃস্থ অসহায় মানুষদের জন্য কিছু করার কথা ভাবে,
তখন মুসা ভাবে আল্লাহ ই এদের অভিভাবক আল্লাহ ই
দেখবেন। যখন রাসুলের অবমাননায় তানিয়া পত্রিকায়
কলাম লেখে , মুসা তা দেখার পর আচ্ছা মতো
বকে দেয় ওকে। বলে যে- তোমাকে কে
বলেছে এসবের প্রতিবাদ করতে? আল্লাহ্র রাসুল
কি কখনো নিজের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে তার
জবাব দিয়েছেন?
এরকম প্রতি পদে পদে মুসা আর তানিয়ার
মনোমালিন্য হতে থাকে। মুসা তানিয়াকে হাত মোজা
পা মোজা পড়তে বলে, বলে বিয়ের পর
অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া যাবেনা।
কিন্তু, তানিয়া সেসব মানতে চায়না। এমন কি ,
কোনদিন ওর লিখা ছাপা হলে সেদিন মুসার চেহারার
দিকে তাকানো যায়না। মুখটা সে প্যাঁচার মতো করে
রাখে। তানিয়া কোন কলিগের সাথে বা কোন বন্ধুর
সাথে কথা বললে মুসার পিত্তি জ্বলে যায়।
মুসা বলে তার সংসারে টি ভি থাকবেনা , খবর দেখা
যাবেনা। এসব ঘরে থাকলেই অশান্তি হবে, তানিয়া
দেশ আর রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাবে। তানিয়ার কাজ
শুধু বাচ্চা জন্ম দেওয়া , আর মানুষ করা। এর মধ্যে
মুসার ডাক্তারি পড়া শেষ হয়ে গেলো। শত রাগারাগির
মধ্যেও তারা ছোট একটা ফ্ল্যাটে তাদের সংসার শুরু
করলো।
এভাবেই দিন যেতে থাকে। মুসা ভীষণ ঘারতেরা
একটা ছেলে। রাগারাগি হলে সে কোনদিন আগ
বাড়িয়ে রাগ ভাঙ্গায় না। এমন কি কথায় কথায় তালাক
প্রসঙ্গ টেনে আনে। রাত বিরাতে তানিয়াকে বাসা
থেকে কিংবা মুসার জীবন থেকে বেরিয়ে
যেতে বলে। মোট কথা তাদের রাগারাগি সব সময় ই
বিপদ সীমা অতিক্রম করে করে দশা ।
বছর ২ পরে তানিয়া পি এইচ ডির স্কলারশিপ পেলো
কানাডায়। কিন্তু মুসা এতে কিঞ্চিৎ খুশি কিংবা আগ্রহী না।
অনার্স পাশ করেছে এই তো বেশি আবার পি এইচ
ডি করতে হবে কেন! এমনি মেয়ে মানুষের
এতো অতিরিক্ত জ্ঞান তার অসহ্য লাগে। তাদের
জন্য রান্না শেখা আর বাচ্চা পালাটাই জরুরী। মুসার
প্রবল আপত্তিতে ওর আর পি এইচ ডি করা হয়না।
তানিয়ার একটা জাতীয় দৈনিকে চাকরী হয়ে যায়।
যেখানে পর্দা ঠিক রেখেও কাজ করা যাবে। কিন্তু
মুসা এতে কিছুতেই রাজি হয়না। সে তানিয়াকে শর্ত
দেয় হয় সে চাকরী করবে না হয় মুসাকে
বেঁছে নিবে। তানিয়া কিছুটা দিশেহারা হয়ে যায়। তার
জীবনের চাওয়া পাওয়া কিছুই যে তার জীবন
সঙ্গীর সাথে মিলেনা, মিলেনা কোন আদর্শ ও।
তাহলে এই একসাথে বেঁচে
Read the rest of this entry

হায়রে বিয়ে! হায়রে লজ্জা ! ( পর্ব – ৩)

হায়রে বিয়ে! হায়রে লজ্জা ! ( পর্ব – ৩)

image

বিয়ের পরে আজকালকের সমাজে সবচেয়ে
বেশি যে জিনিষটা নিয়ে সমস্যা হয় সেটা হোল
চাকরি। অনেক ছেলেরা নিজের বউয়ের বাহিরে
যাওয়া মেনে নিতে পারেনা, আবার অনেকে বউ
চাকরি করবেনা এটা মেনে নিতে পারেনা। আসলে
এ ব্যাপারে ইসলাম কি বলে? তাত্ত্বিক কথায় না
যেয়ে সহজ ভাষায় বললে বলা যায়,
ইসলাম নারীকে চাকরি করতে বাঁধা ও দেয়না, এবং
বাধ্য করায় ও বিশ্বাসী নয়। নারী যদি নিজের পর্দা
ও শরীয়ত ঠিক রেখে চাকরী করতে পারে
ইসলামের এতে আপত্তি নেই। কিন্ত
এক্ষেত্রে কথা থেকে যায়। ইসলাম নারীর
এতো কঠিন জীবন চায়না। কারন এতে নারীর
শারীরিক ও মানসিক চাপ বাড়ে।
তাই প্রয়োজন ও সুযোগ বুঝে চাকরী করাই
উত্তম। যাই হোক , সেদিকে যাচ্ছিনা আর।
আজকের ঘটনায় চলে যাচ্ছি ।
ঘটনা – ৪
হৃদিতা বাবা মার বড় মেয়ে। পড়ুয়া আর খুব চটপটে
মেয়ে। দেখতে খুব আহামরি সুন্দরী নয়, তবে
স্বাস্থ্য ভালো । ভিকারুন্নিসায় যখন পড়তো তখনি
পরিচয় হয় রিফাতের সাথে। তখন রিফাত তেজগাঁ
কলেজের অনার্সের ছাত্র। দেখতে শুনতে
কোন দিক দিয়েই রিফাত হৃদিতার যোগ্য নয়
হয়তো, কিন্তু প্রতিদিন হৃদিতার জন্য কলেজের
সামনে যেয়ে দাড়িয়ে থাকতো রিফাত। এই জন্য
মায়া থেকেই রিফাত কে ভালোবেসে ফেলে
হৃদিটা।
আর ১০ টা ভালো ছাত্রীর মতোই বাবা মার অতিরিক্ত
যত্ন পেতো সে। তাই কলেজ শেষ হলেই
বাসায় যেতে হতো। ওই বাসায় যাওয়ার পথ টুকু ই
রিফাত হৃদিটার সাথে থাকতো।
এভাবে দেখতে দেখতে হৃদিতার ইন্টার পরীক্ষা
চলে আসলো। রেজাল্ট কিছুটা খারাপ হলো তার। কি
করবে! প্রেমের মরা যে রেজাল্টেই
প্রতীয়মান হয়।
হৃদিতার বাবা প্রচণ্ড বদ রাগী সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।
মেয়েকে আচ্ছা মতো শাসালেন । রিফাত ও
হৃদিতাকে মেডিকেলের জন্য খুব চাপ দিতে
থাকে। মেডিকেলে ভর্তি না হতে পারলে সে
নাকি হৃদিটার সাথে কোন সম্পর্কই রাখবেনা।
আসলে রিফাত একেবারেই অজ পাড়া গায়ের
ছেলে। সে কিছুটা লোভী , এসব ব্যাপারে।
হৃদিতাকে ভালবাসার পিছনে তার অনেক স্বার্থ
আছে। সে স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটলে তার রাগ
পশুত্বকে ও হার মানায়।
অতিরিক্ত মানসিক চাপে হৃদিতা মেডিকেল ও মিস
করলো। ঠাই পেলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ।
রিফাত এতে খুব নারাজ, যদিও রিফাত নিজে পরে
তেজগাঁ কলেজে তবুও হৃদি তা কে সে পাত্তা
দেয়না। কথায় কথায় বকে, আর চাপ দেয় তাকে
ক্লাসে ফাস্ট হতে হবে, আবার মেডিকেলে
পরীক্ষা দিতে হবে। মেডিকেল আর ভার্সিটির পড়া
লিখা একসাথে সামলে দিশেহারা। এছাড়া রিফাত ও
কেমন হয়ে গেছে জানি। হৃদিতা র চেহারা, ফিগার
এসব নিয়ে প্রায় ই উল্টা পাল্টা কথা বলে। কোক
খেতে দেয়না সে হৃদিতা কে।বলে- তোমার বডি
এমনি ই তো কদাকার! এর উপর আরও কোক
খেয়ে মোটা হবে নাকি?
পাশ দিয়ে কোন সুন্দর মেয়ে গেলে রিফাত
পিপাসু নয়নে চেয়ে থাকে। তার হায় আফসোস
হৃদিটা পড়ে ফেলে তার চোখের ভাষায়। আর
মনে মনে ভাবে, ও ভালো না বাসলে আমার যে
কি হতো? বেচারা! আমার মতো অসুন্দর একটা
মেয়েকে ভালো বাসল। থাক ! এসব সহ্য করে
নেই।
দেখতে দেখতে হৃদিতার মেডিকেল পরীক্ষা
চলে আসলো। কিন্তু খুব আশানুরূপ হোল না। ও
দিকে ভার্সিটিতেও যাওয়া হয়না বহুদিন।
মেডিকেলের রেজাল্ট বের হোল। হৃদিটা এবারও
মিস করলো। খবর টা রিফাত কে জানানোর পর সে
তার ফোন কেটে দিলো। হৃদিতা কতো বার কল
করলো। কিন্তু তার যে ধরার নাম নেই!
হৃদিটা ঠিক করলো রিফাতের মেসে যাবে।
মেসের সামনে যেয়ে দাড়িয়ে কল দিলো রিফাত
কে, দোকান থেকে।
এবার শে ফোন ধরল । হৃদিতা বলল- আমি তোমার
বাসার সামনে, প্লিয আমাকে মাফ করে দাও?
– তুই আসছিস ক্যান? তোরে এখানে কে আসতে
বলছে হতচ্ছারি?
– তুমি আমার সাথে এমন করছ কেন? তুই তকারি করছ
কেন?
– তোর মতো *****জাদির সাথে সম্পর্ক না রাখলে
আমার কিচ্ছু যায় আসেনা, মেডিকেলে chance
পাসনি আবার কথা বলতে আসছিস! আমার সাথে দেখা
করতে আসছিস! তোর সাহস তো কম না!
– ঠিক আছে। আমি বাসায় চলে গেলাম। তুমি ভালো
থাকো।
হৃদিতা বাসায় যেয়ে
Read the rest of this entry