Monthly Archives: অগাষ্ট 2015

ইসলামী শরীয়তে যেনা এবং ধর্ষণের শাস্তি।

image

ইসলামের দৃষ্টিতে ধর্ষকের শাস্তি
বেশ কিছুদিন ধরে সংবাদপত্রে ধর্ষণের
সংবাদগুলো গুরুত্ব পাচ্ছে। ফেইসবুক ও
ব্লগাগুলোতেও বিষয়টি গুরুত্বের সাথে
আলোচনায় আসছে। ভিন্ন শব্দ ও প্রকাশে সবার একটাই চাওয়া। ধর্ষককে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন করা। এসব আলোচনা দেখে এ বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে লেখার নিয়ত করেছি। আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে শুরু করছি।

ধর্ষণের সংজ্ঞা:
উইকিপিডিয়া অনুযায়ী ধর্ষণ হলো:
Rape is a type of sexual assault usually involving sexual intercourse, which is initiated by one or more persons against another person without
that person’s consent.
বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞা ও শাস্তির যেসব বিবরণ এসেছে:
দন্ডবিধি ১৮৬০ – The Penal Code 1860: ধারা ৩৭৫-৩৭৬
A man is said to commit “rape” who except in the case hereinafter excepted, has sexual intercourse with a woman under circumstances falling under any
of the five following descriptions:
Firstly. Against her will.
Secondly. Without her consent.
Thirdly. With her consent, when her consent has been obtained by putting her in fear of death, or of hurt. Fourthly. With her consent, when the man knows that he is not her husband, and that her consent is given because she believes that he is another man to whom she is or believes herself to be
lawfully married. Fifthly. With or without her consent, when she is under fourteen years of age.
Explanation. Penetration is sufficient to constitute the sexual intercourse necessary to the offence of rape.
Exception. Sexual intercourse by a man with his own wife, the wife not being under thirteen years of age, is not rape. 376. Whoever commits rape shall be
punished with 131[ imprisonment] for life or with imprisonment of eitherdescription for a term which may extend to ten years, and shall also be liable to fine, unless the woman raped is his own
wife and is not under twelve years of age, in which case he shall be punished with imprisonment of either description for a term which may extend to two
years, or with fine, or with both.
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এ রয়েছে: ৯৷ (১) যদি কোন পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহা হইলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত
অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷
ব্যাখ্যা৷- যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত
২[ ষোল বৎসরের] অধিক বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তাহার সম্মতি আদায় করিয়া, অথবা
৩[ ষোল বৎসরের] কম বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন৷
(২) যদি কোন ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ বা উক্ত ধর্ষণ পরবর্তী তাহার অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিতা নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি
মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে
দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অন্যুন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷
(৩) যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষন করেন এবং ধর্ষণের ফলে উক্ত নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা তিনি আহত হন, তাহা হইলে
ঐ দলের প্রত্যেক ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা
যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অন্যুন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷
(৪) যদি কোন ব্যক্তি কোন নারী বা শিশুকে-
(ক) ধর্ষণ করিয়া মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত
অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন;
(খ) ধর্ষণের চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত
ব্যক্তি অনধিক দশ বত্সর কিন্তু অন্যুন পাঁচ বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷
(৫) যদি পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে কোন নারী ধর্ষিতা হন, তাহা হইলে যাহাদের হেফাজতে থাকাকালীন উক্তরূপ ধর্ষণ সংঘটিত
হইয়াছে, সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ ধর্ষিতা নারীর হেফাজতের জন্য সরাসরিভাবে দায়ী ছিলেন, তিনিবা তাহারা প্রত্যেকে, ভিন্নরূপ প্রমাণিত না হইলে,
হেফাজতের ব্যর্থতার জন্য, অনধিক দশ বত্সর কিন্তু অন্যুন পাঁচ বত্সর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয়
হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অন্যুন দশ হাজার টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷
টিকা দুটিতে আছে: “ষোল বত্সরের” শব্দগুলি “চৌদ্দ বত্সরের” শব্দগুলির পরিবর্তে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন, ২০০৩ (২০০৩ সনের
৩০ নং আইন) এর ৩ ধারাবলে প্রতিস্থাপিত।

image

ইসলামে ধর্ষণের সংজ্ঞা:

ইসলাম ধর্ষণকে ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেনি। কারণ ইসলামে ধর্ষণ ভিন্ন কোনো অপরাধ নয়। বরং বিবাহবহির্ভূত যে কোনো যৌন সঙ্গমই ইসলামে
অপরাধ। যাকে “যিনা” শব্দে উল্লেখ করা হয়েছে। যিনা সুস্পষ্ট হারাম এবং শিরক ও হত্যার পর বৃহত্তম
অপরাধ। আল-কুরআনে আছে:
ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻟَﺎ ﻳَﺪْﻋُﻮﻥَ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻟَٰﻬًﺎ ﺁﺧَﺮَ ﻭَﻟَﺎ
ﻳَﻘْﺘُﻠُﻮﻥَ ﺍﻟﻨَّﻔْﺲَ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﺣَﺮَّﻡَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺇِﻟَّﺎ ﺑِﺎﻟْﺤَﻖِّ ﻭَﻟَﺎ
ﻳَﺰْﻧُﻮﻥَ ۚ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﻔْﻌَﻞْ ﺫَٰﻟِﻚَ ﻳَﻠْﻖَ ﺃَﺛَﺎﻣًﺎ ﴿
٦٨﴾ ﻳُﻀَﺎﻋَﻒْ ﻟَﻪُ ﺍﻟْﻌَﺬَﺍﺏُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻭَﻳَﺨْﻠُﺪْ
ﻓِﻴﻪِ ﻣُﻬَﺎﻧًﺎ ﴿٦٩﴾ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﻦ ﺗَﺎﺏَ ﻭَﺁﻣَﻦَ ﻭَﻋَﻤِﻞَ
ﻋَﻤَﻠًﺎ ﺻَﺎﻟِﺤًﺎ ﻓَﺄُﻭﻟَٰﺌِﻚَ ﻳُﺒَﺪِّﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺳَﻴِّﺌَﺎﺗِﻬِﻢْ
ﺣَﺴَﻨَﺎﺕٍ ۗ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭًﺍ ﺭَّﺣِﻴﻤًﺎ ﴿٧٠﴾
এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের এবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না।
যারা একাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কেয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুন হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে। কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গোনাহকে পুন্য দ্বারা পরিবর্তত করে এবং দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(ফুরকান, ৬৮-৭০)
অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘْﺮَﺑُﻮﺍ ﺍﻟﺰِّﻧَﺎ ﺇِﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻓَﺎﺣِﺸَﺔً ﻭَﺳَﺎﺀَ
ﺳَﺒِﻴﻠًﺎ ﴿ﺍﻹﺳﺮﺍﺀ: ٣٢﴾
আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। (ইসরা, ৩২)
ইমাম কুরতুবী বলেন, “উলামায়ে কিরাম বলেন, ‘যিনা করো না’ –এর চেয়ে ‘যিনার কাছেও যেয়ো না’
অনেক বেশি কঠোর বাক্য।”
এর অর্থ যিনার ভূমিকা যেসব বিষয়, সেগুলোও হারাম।
যিনার শাস্তি ইসলামে যিনার শাস্তি ব্যক্তিভেদে একটু ভিন্ন।
যিনাকারী যদি বিবাহিত হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে পাথর মেরে মৃত্যুদন্ড দেয়া হবে। আর যদি অবিবাহিত হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে একশত ছড়ি
মারা হবে। নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য একই শাস্তি।

image

ﺍﻟﺰَّﺍﻧِﻴَﺔُ ﻭَﺍﻟﺰَّﺍﻧِﻲ ﻓَﺎﺟْﻠِﺪُﻭﺍ ﻛُﻞَّ ﻭَﺍﺣِﺪٍ ﻣِّﻨْﻬُﻤَﺎ
ﻣِﺎﺋَﺔَ ﺟَﻠْﺪَﺓٍ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺄْﺧُﺬْﻛُﻢ ﺑِﻬِﻤَﺎ ﺭَﺃْﻓَﺔٌ ﻓِﻲ ﺩِﻳﻦِ
ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﺗُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟْﻴَﻮْﻡِ ﺍﻟْﺂﺧِﺮِ
ﻭَﻟْﻴَﺸْﻬَﺪْ ﻋَﺬَﺍﺑَﻬُﻤَﺎ ﻃَﺎﺋِﻔَﺔٌ ﻣِّﻦَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﴿
ﺍﻟﻨﻮﺭ: ٢﴾
ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের
প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত কর।
আল্লাহর বিধান কার্যকর কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে
থাক। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। (নূর: ২)
হাদীসে আছে,
ﺍﻟﺒﻜﺮ ﺑﺎﻟﺒﻜﺮ ﺟﻠﺪ ﻣﺎﺋﺔ، ﻭﻧﻔﻲ ﺳﻨﺔ، ﻭﺍﻟﺜﻴﺐ
ﺑﺎﻟﺜﻴﺐ ﺟﻠﺪ ﻣﺎﺋﺔ ﻭﺍﻟﺮﺟﻢ
অবিবাহিত পুরুষ-নারীর ক্ষেত্রে শাস্তি এক শত বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর। আর বিবাহিত পুরুষ-নারীর ক্ষেত্রে একশত বেত্রাঘাত ও
রজম (পাথর মেরে মৃত্যুদন্ড)। (সহীহ মুসলিম)
এই হাদীস থেকে অন্য ফিক্বহের ফকীহগণ বলেন, যিনাকারী অবিবাহিত হলে তার শাস্তি দুটো। ১. একশত বেত্রাঘাত। ২. এক বছরের জন্য দেশান্তর। আর হানাফী ফকীহগণ বলেন, এক্ষেত্রে হদ (শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি) হলো একশত বেত্রাঘাত। আর দেশান্তরের বিষয়টি ক্বাযী বা বিচারকের বিবেচনাধীন। তিনি ব্যক্তি বিশেষে তা
প্রয়োগ করতে পারেন।
ধর্ষণের শাস্তি ধর্ষণের ক্ষেত্রে একপক্ষে যিনা সংঘটিত হয়। আর অন্যপক্ষ হয় মজলুম বা নির্যাতিত। তাই মজলুমের কোনো শাস্তি নেই। কেবল জালিম বা ধর্ষকের শাস্তি হবে।
ধর্ষণের ক্ষেত্রে দুটো বিষয় সংঘটিত হয়। ১. যিনা
২. বলপ্রয়োগ/ ভীতি প্রদর্শন।
প্রথমটির জন্য পূর্বোক্ত যিনার শাস্তি পাবে। পরেরটির জন্য ফকীহদের একটি অংশ বলেন, মুহারাবার শাস্তি হবে।
মুহারাবা ( ﻣﺤﺎﺭﺑﺔ ) হলো, পথে কিংবা অন্যত্র অস্ত্র দেখিয়ে বা অস্ত্র ছাড়াই ভীতি প্রদর্শন করে ডাকাতি করা। এতে কেবল সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া হতে
পারে, আবার কেবল হত্যা করা হতে পারে। আবার দুটোই হতে পারে।
মালেকী ফকীহগণ মুহারাবার সংজ্ঞায় সম্ভ্রম লুট করার বিষয়টিও যোগ করেছেন।
তবে সকল ফকীহই মুহারাবাকে পৃথিবীতে অনাচার সৃষ্টি, নিরাপত্তা বিঘ্নিত করণ, ত্রাস সৃষ্টি ইত্যাদি অর্থে
উল্লেখ করেছেন। মুহারাবার শাস্তি আল্লাহ এভাবে উল্লেখ করেছেন,
ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺟَﺰَﺍﺀُ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﺤَﺎﺭِﺑُﻮﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ
ﻭَﻳَﺴْﻌَﻮْﻥَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻓَﺴَﺎﺩًﺍ ﺃَﻥ ﻳُﻘَﺘَّﻠُﻮﺍ ﺃَﻭْ
ﻳُﺼَﻠَّﺒُﻮﺍ ﺃَﻭْ ﺗُﻘَﻄَّﻊَ ﺃَﻳْﺪِﻳﻬِﻢْ ﻭَﺃَﺭْﺟُﻠُﻬُﻢ ﻣِّﻦْ ﺧِﻠَﺎﻑٍ
ﺃَﻭْ ﻳُﻨﻔَﻮْﺍ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺫَٰﻟِﻚَ ﻟَﻬُﻢْ ﺧِﺰْﻱٌ ﻓِﻲ
ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻭَﻟَﻬُﻢْ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺂﺧِﺮَﺓِ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﻋَﻈِﻴﻢٌ ﴿
ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ: ٣٣﴾
যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের
শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি। (মায়িদা: ৩৩)

image

এখানে হত্যা করলে হত্যার শাস্তি, সম্পদ ছিনিয়ে নিলে বিপরীত দিক থেকে হাত-পা কেটে দেয়া, সম্পদ ছিনিয়ে হত্যা করলে শূলীতে চড়িয়ে হত্যা করা – এরূপ ব্যখ্যা ফকীহগণ দিয়েছেন। আবার এর চেয়ে লঘু অপরাধ হলে দেশান্তরের শাস্তি দেয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।
মোটকথা, হাঙ্গামা ও ত্রাস সৃষ্টি করে করা অপরাধের শাস্তি ত্রাস ও হাঙ্গামাহীন অপরাধের শাস্তি থেকে গুরুতর।
এ আয়াত থেকে বিখ্যাত মালেকী ফকীহ ইবনুল আরাবী ধর্ষণের শাস্তিতে মুহারাবার শাস্তি প্রয়োগের মত ব্যক্ত করেছেন।
উল্লেখ্য, ধর্ষক যদি বিবাহিত হয়, তাহলে এমনিতেই তাকে পাথর মেরে মৃত্যুদন্ড দেয়া হবে। কিন্তু সে বিবাহিত না হলে তাকে বেত্রাঘাতের পাশাপাশি
বিচারক চাইলে দেশান্তর করতে পারেন। কিংবা অপরাধ গুরুতর হলে বা পুনরায় হলে অবস্থা বুঝে মুহারাবার
শাস্তিও প্রদান করতে পারেন।
ইসলামের বিধানের আলোকে বাংলাদেশের ধর্ষণ আইনের পর্যালোচনা:
১. বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ষোল
বৎসরের অধিক বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তাহার সম্মতি আদায় করিয়া,অথবা
ষোল বৎসরের কম বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম
করেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন৷
ইসলামের সাথে এই সংজ্ঞার তেমন কোনো বিরোধ নেই। তবে এতে কিছু অসামঞ্জস্যতা আছে।
ইসলাম সম্মতি-অসম্মতি উভয় ক্ষেত্রে নারী- পুরুষের বিবাহ বহির্ভূত দৈহিক মিলনকে দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এই
আইনে কেবল অসম্মতির ক্ষেত্রে তাকে
অপরাধ বলা হয়েছে।
সম্মতি ছাড়া বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ইসলাম ও দেশীয় আইন উভয়ের চোখে অপরাধ। আর সম্মতিসহ সম্পর্ক ইসলামে অপরাধ, দেশীয় আইনে নয়। এটি নৈতিকভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ককে সম্মতি সাপেক্ষে অনুমতি দেয়া হলে মানুষ বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে উৎসাহী হয়; তার চাহিদা বিস্তৃত হয়। পরে এক পর্যায়ে সে জোরপূর্বক তার চাহিদা মেটাতে সচেষ্ট হয়। আবার কোনো
ক্ষেত্রে শুরুতে সম্মতি থাকলেও পরে ভিন্ন
কোনো কারণে সম্মতি ছিল না বলে বলা হয়। সম্মতি আর অসম্মতির বিভাজনরেখা খুব ঠুনকো। এর
দ্বারা ধর্ষণ কখনোই রোধ করা সম্ভব নয়।
একই ব্যক্তি তার স্ত্রীভিন্ন অন্য নারীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক করে যখন পার পেয়ে যাবে, তখন সে এক পর্যায়ে জোরপূর্বকও তা করবে।চাহিদাকে সীমিত না করে ধর্ষণ রোধ করার চিন্তা অমূলক।
পক্ষান্তরে ইসলাম মানুষের চাহিদাকে সীমিত করে দেয়। বিবাহ ছাড়া কোনো নারী-পুরুষ দৈহিক সম্পর্কে জড়িতে হলেই তাকে অপরাধ বলে গণ্য করে। কাজেই জোরপূর্বক করাকে অনুমোদন দেয়ার তো প্রশ্নই আসে না।
২. আইনে সম্মতির বিষয়টি অপরাধের সীমা হওয়ায় ষোল বছরের বয়সের কথা বলা হয়েছে, যা পূর্বে চৌদ্দ বছর ছিল এবং পরে তা সংশোধন করা
হয়েছে। অর্থাৎ ষোল বছরের কম কেউ
সম্মতিক্রমে দৈহিক মিলন করলেও তা দন্ডনীয় অপরাধ হবে। এবং পুরুষ শাস্তি পাবে। তবে এক্ষেত্রে নারীর কোনো শাস্তি হবে না। (অবশ্য আইনে নারীর কোনো অবস্থায়ই শাস্তি
হওয়ার কথা না। ধর্ষণ হলে তো নয়ই। ধর্ষণ না হলেও নয়। কারণ ধর্ষণ না হয়ে সম্মতিক্রমে হলে কারোরই শাস্তি হবে না।)
পক্ষান্তরে ইসলাম কোনো নির্দিষ্ট বয়স
উল্লেখ করেনি। বরং বিবাহ বহির্ভূত দৈহিক সম্পর্ককেই যিনা বলেছে, যা দন্ডনীয় অপরাধ।
এক্ষেত্রে নারীর সম্মতি থাকলে সেও শাস্তি পাবে। নতুবা পাবে না।
তবে ইসলামে যে কোনো বিধান প্রযোজ্য
হওয়ার জন্য বালেগ বা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া জরুরী।
আর বালেগ হওয়ার বয়স ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হতে পারে। স্বেচ্ছায় সম্মতিতে কেউ
বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক করলে তাকে বালেগই ধরা হবে। কাজেই তার ওপরও শাস্তি প্রযোজ্য হবে।
৩. আইনে ধর্ষণের কারণে মৃত্যু না হলে তার মৃত্যুদন্ড নেই। কেবল যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং অর্থদন্ড। পক্ষান্তরে ইসলামে বিবাহিত কেউ ধর্ষণ
বা যিনা করলে তার শাস্তি রজম বা পাথর মেরে মৃত্যুদন্ড।
আইনে ধর্ষণের কারণে মৃত্যু হলে তাকে
মৃত্যুদন্ড দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আর ইসলামে ধর্ষণের কারণে মৃত্যু হলে সে প্রথমে যিনার শাস্তি পাবে। পরে হত্যার শাস্তি পাবে। হত্যা যদি
অস্ত্র দিয়ে হয় তাহলে ক্বিসাস বা মৃত্যুদন্ড। আর যদি অস্ত্র দিয়ে না হয়, এমন কিছু দিয়ে হয় যা দিয়ে
সাধারণত হত্যা করা যায় না, তাহলে দিয়ত বা অর্থদন্ড, যার
পরিমাণ একশত উটের মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ (প্রায়
কোটি টাকা)।
ধর্ষণের সাথে যদি আরো কিছু সংশ্লিষ্ট হয়, যেমন ভিডিও ধারণ, তা প্রচার ও প্রসার ইত্যাদি, তাহলে আরো শাস্তি যুক্ত হবে। ইসলামে ধর্ষণ প্রমাণ করা:
যিনা প্রমাণের জন্য ইসলামে দুটোর যে
কোনোটি জরুরী। ১. ৪ জন স্বাক্ষ্য ২.
ধর্ষকের স্বীকারোক্তি।
তবে স্বাক্ষ্য না পাওয়া গেলে আধুনিক ডিএনএ টেস্ট, সিসি ক্যামেরা, মোবাইল ভিডিও, ধর্ষিতার বক্তব্য ইত্যাদি অনুযায়ী ধর্ষককে দ্রুত গ্রেফতার করে স্বীকার করার জন্য চাপ দেয়া হবে। স্বীকারোক্তি পেলে তার ওপর শাস্তি কার্যকর করা হবে।

image

উপসংহার ও মন্তব্য:
ইসলামে ধর্ষণ ও যিনা, তথা সম্মতি ও অসম্মতি উভয়
ক্ষেত্রেই পুরুষের শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে।
তবে নারীর ক্ষেত্রে ধর্ষিতা হলে কোনো
শাস্তি নেই, সম্মতিতে হলে শাস্তি আছে। যৌন
অপরাধ নির্ণয়ে ইসলাম নির্ধারিত বিভাজনরেখা (বিবাহিত- অবিবাহিত) সর্বোৎকৃষ্ট। বাংলাদেশের আইনে যতটুকু শাস্তি রয়েছে তা প্রয়োগে প্রশাসনের অবহেলা আর বিভিন্ন রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক চাপ প্রয়োগে ধর্ষণের
উপযুক্ত শাস্তি হয় না। উপরন্তু ধর্ষিতাকে একঘরে করে রাখা হয়, তাকে সমাজে বাঁকা চোখে দেখা হয়। তার পরিবারকে হুমকি-ধামকি দেয়া হয়। এগুলো
কোনোটিই ইসলাম সমর্থন করে না।
ইমাম-খতীব-মুহাদ্দীস-মুফাসসির-মুফতী-ওয়ায়েজ সবারই এ বিষয়ে সচেতনতা তুলে ধরা প্রয়োজন।
সহযোগী সূত্র:
১. ﺍﻟﻤﻮﺳﻮﻋﺔ ﺍﻟﻔﻘﻬﻴﺔ ﺍﻟﻜﻮﻳﺘﻴﺔ
২. ﺃﺣﻜﺎﻡ ﺟﺮﻳﻤﺔ ﺍﻏﺘﺼﺎﺏ ﺍﻟﻌﺮﺽ ﻓﻲ ﺍﻟﻔﻘﻪ ﺍﻹﺳﻼﻣﻲ
ﻭ ﺗﻄﺒﻴﻘﺎﺗﻬﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻤﻠﻜﺔ ﺍﻟﺴﻌﻮﺩﻳﺔ، ﺇﻋﺪﺍﺩ : ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﺑﻦ
ﺻﺎﻟﺢ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﺍﻟﻠﺤﻴﺪﺍﻥ
৩. উইকিপিডিয়া
৪. নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০: ধারা ৯
৫. দন্ডবিধি ১৮৬০ – The Penal Code 1860: ধারা ৩৭৫, ৩৭৬

আপনার ঘর কী ইসলামিক ঘর, আপনার পরিবার কি ইসলামী পরিবার?

আল্লাহ সুবহ়ানাহু ওয়া তা‘আলা বলেছেন, “আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের ঘরে বসবাসের ব্যবস্থা করেছেন…” [১]

image

প্রশ্নটা হয়তো শুনতে কিছুটা অদ্ভুত লাগতে পারে। অনেকে হয়তো শোনা মাত্রই বলে বসবেন, “আমার বাড়ি অবশ্যই ইসলামিক বাড়ি!! আমরা মুসলিম পরিবার, কাজেই আমাদের
বাড়ি পুরোপুরি ইসলামিক!!” আসলেই কি? নিচে দেওয়া ছোট্ট চেকলিস্টের সাথে মিলিয়ে দেখুন তো আসলেই আপনার বাড়ি ইসলামিক কি না?

image

১. আমি একজন ধার্মিক জীবনসঙ্গী বেছে নিয়েছি ধার্মিক ও ন্যায়নিষ্ঠ জীবনসঙ্গীর ব্যাপারে অনেক হ়াদীস়েই গুরুত্বের সঙ্গে বলা হয়েছে। কেন বলা হয়েছে সেটাও স্পষ্ট: সাধারণ জীবনসঙ্গীদের তুলনায়
একজন ধার্মিক জীবনসঙ্গী সংসারে অধিক সুখ ও পরিতৃপ্তির পরিবেশ গড়ে তুলতে পারবে। স্ত্রী ধার্মিক হলে অন্যান্য স্ত্রীদের সাথে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায়
রাখতে পারবে। ধার্মিক স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে গড়ে তুলতে পারবে একটি
ন্যায়নিষ্ঠ ও ধার্মিক পরিবার। আর এটাই ইসলামিক বাড়ির মূল ভিত্তি।

২. আমি আমার জীবনসঙ্গীকে সাহায্য করি প্রত্যেকের নিজ নিজ কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন, দুজনের মধ্যে মমতা ও ভালোবাসার বন্ধনের মাধ্যমে গড়ে ওঠে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক একটি পরিবার। অন্যান্য আধ্যাত্মিক ব্যাপারগুলোতে পরস্পরকে দিকনির্দেশনা দেওয়ার মাধ্যমে এই
সহযোগিতা আরও বিস্তৃত হতে থাকে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ঈমান বাড়ানোর
জন্য সংগ্রাম করা; ‘ইবাদাহ্র প্রতি যথাযথ মনোযোগ দেওয়া; প্রয়োজন হলে শুধরে
দেওয়া; ক়ুর’আন তিলাওয়াত করতে উৎসাহিত করা; তাহাজ্জুদ সলাত পড়া; দান করা; ইসলামি বই, ম্যাগাজিন পড়া; ধার্মিক বন্ধু বাছাই করতে সাহায্য করা; ভালো কাজের আদেশ দেওয়া এবং
মন্দ কাজ করতে নিষেধ করা। ঈমান এমন এক জিনিস যা কখনো বাড়ে, কখনো কমে।
কাজেই নিজেদের ঈমান বাড়ানোর প্রতি যেমন খেয়াল রাখতে হবে, তেমনি খেয়াল
রাখতে হবে আমাদের জীবনসঙ্গীদের ঈমানও যেন ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে
থাকে।

image

৩. আমাদের বাড়ি আল্লাহর যিক্রের স্থান
বহু উপায়ে আল্লাহর যিক্র করা যায়: মনে মনে, নির্দিষ্ট কিছু যিক্র পাঠ করে, সলাতের মাধ্যমে, ক়ুর’আন আবৃত্তি করে, আযকার মুখস্থ করে, ইসলামিক ইস্যু আলোচনার মাধ্যমে কিংবা ইসলামিক বিভিন্ন বিষয় পড়ে পড়ে। ফেরেশতারা যেন আল্লাহর বারাকা নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে সেজন্য নিয়মিত ঘরে এ ধরনের যিক্র হওয়া প্রয়োজন।
রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, “যে-ঘরে আল্লাহর স্মরণ করা হয় আর যে ঘরে স্মরণ করা হয় না, তাদের তুলনা হচ্ছে যেন একটি জীবিত আর অপরটি মৃত।” [২]
৪. আমাদের ঘর ‘ইবাদাতের ঘর
অর্থাৎ যথাযথ সময়ে আমাদের ঘরে সলাত আদায় করা হয়। আর যখন পরিবারের একাধিক সদস্য উপস্থিত থাকে, তখন সবাই একসাথে জামা‘আত-বদ্ধ হয়ে সলাত আদায় করে।
কেউ কেউ তাদের বাসায় সলাত আদায়ের জন্য আলাদা একটা ঘরও রাখতে পারেন।
বিশেষ করে খেয়াল রাখবেন সেই ঘরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাতন্ত্র্য যেন
বজায় থাকে। নারীদের জন্য সলাত বাসায় পড়াই উত্তম। আর পুরুষদের জন্য বাধ্যতামূলক সালাতগুলো মাসজিদে আদায়ের পর, ঐচ্ছিক সালাতগুলো বাসায় পড়তে উৎসাহ দেওয়া
হয়েছে। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “অন্যের সাথে পড়ার চেয়ে বাসায় ঐচ্ছিক সলাত পড়া উত্তম; ফার্দ় সলাত যেমন একা একা না পড়ে জামা‘আত-
বদ্ধভাবে পড়া উত্তম।”[৩] এটা এজন্য যে, যাতে মাসজিদের মতো বাসাও ‘ইবাদাতের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয়।
৫. শয়তানকে দূরে রাখার জন্য আমরা নিয়মিত সূরাহ আল-বাক়ারাহ ও আয়াতুল-কুরসি তিলাওয়াত করি
আল্লাহর বার্তাবাহক বলেছেন, “তোমাদের বাড়িতে সূরাহ আল-বাক়ারাহ তিলাওয়াত করো।
কেননা, যে বাড়িতে সূরাহ আল-বাক়ারাহ তিলাওয়াত করা হয় শয়তান সেই বাড়িতে প্রবেশ
করে না।”[৪] তিনি আরও বলেছেন, “যখন তোমরা বিছানায় [ঘুমাতে] যাবে তখন আয়াতুল- কুরসি পাঠ করো: ‘আল্লাহ! তিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব, অবিনশ্বর’—এই আয়াতের শেষ পর্যন্ত। এই আয়াত তিলাওয়াতের ফলে আল্লাহর পক্ষ
থেকে তোমার জন্য একজন অভিভাবক নিযুক্ত করা হবে, আর সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে ঘেঁষতে পারবে না।[৫]
৬. পড়াশোনা আমাদের ঘরের এক চলমান প্রক্রিয়া এই দায়িত্ব প্রাথমিকভাবে ঘরের মূল কর্তার। তাকে নিশ্চিত করতে হবে যে, তিনি তার
পরিবারকে সঠিক পথে চালিত করছেন: ভালো কাজের আদেশ দিচ্ছেন, মন্দ কাজে নিষেধ করছেন। পরিবারের সব সদস্যের উপর জ্ঞান অর্জন অত্যাবশ্যক। জ্ঞানের ভিত্তিতেই সতেজ হয়ে ওঠে ঈমান। ইসলামের বুনিয়াদি বিষয় সম্পর্কে অবহিত সদস্যদের দিয়ে একটি পাঠচক্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে যেখান থেকে পরিবারের সব সদস্য উপকৃত হতে পারবে। এসব পাঠচক্রে অংশগ্রহণের জন্য শিশুদের বিশেষভাবে
উৎসাহ দিতে হবে। তাতে করে তারা এতে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে
এবং ভবিষ্যতে তাদের জীবনেও তারা এর বাস্তবায়ন করবে।

image

৭. আমাদের ঘরে ইসলামিক লাইব্রেরি আছে এসব লাইব্রেরিতে স্থান পেতে পারে বই, ইসলামি ক্যাসেট ও সিডি। পরিবারের সদস্যরা যেন উপকৃত হতে পারে সেজন্য এসব বই ও সিডির বিষয়বস্তুগুলো সঠিক ও নির্ভরযোগ্য হওয়া জরুরি। বইপত্র ও সিডির সংগ্রহ বৈচিত্রময় হওয়া উচিত। এতে করে পরিবারে ছোট সদস্য থেকে শুরু করে বড়রাও লাইব্রেরি থেকে পছন্দমাফিক বই বা
সিডি বাছাই করে নিতে পারবে। পরিবারের সদস্যদের উপযোগী বিভিন্ন ভাষার বই/সিডি রাখা যেতে পারে। আরবি বই বা সিডি তো অবশ্যই থাকতে হবে। পরিবারের
সদস্যদের ক়ুর’আনের ভাষা জানতে হবে। না জানলে শেখার প্রক্রিয়ায় থাকতে হবে।
আর বইগুলো হতে পারে বিভিন্ন বিষয়ের উপর। সহজেই যেন বিষয়মাফিক বই খুঁজে পাওয়া এ জন্য ঠিকমতো সাজিয়ে রাখতে হবে। সিডিগুলো হতে পারে ক়ুর’আন তিলাওয়াতের উপর, ইসলামি লেকচার, খুতবা, ছোট শিশুদের জন্য দু‘আমূলক ও আদবকায়দা
শেখানোর সিডি, নাশীদ (বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার ছাড়া ইসলামিক গান) ইত্যাদি। পরিবারের সদস্যদের একে অপরকে প্রতিনিয়ত এসব বই ও সিডি ব্যবহার করতে উৎসাহ দিতে
হবে। অন্যান্য যেসব মুসলিম পরিবারে এগুলো প্রয়োজন তাদের সাথে এসব বই ও সিডি শেয়ার করতে হবে।

৮. নাবি মুহ়াম্মাদের মতো নৈতিকতা ও আদব বজায় রাখার চেষ্টা করি
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কোনো বাসার লোকদের প্রতি আল্লাহ যখন ভালো কিছু ইচ্ছে করেন তখন তিনি তাদের মধ্যে দয়া ছড়িয়ে দেন।”[৬]
তিনি আরও বলেছেন, “আল্লাহ দয়াশীলতাকে ভালোবাসেন। দয়াশীলতাকে আল্লাহ
এমনভাবে পুরস্কৃত করেন যেমনটা আর কিছুর জন্য করেন না।”[৭] নাবি সল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের দয়া, মানুষের সঙ্গে তার সদাচরণের অসংখ্য উদাহরণ ছড়িয়ে আছে যেগুলো আমরা অনুকরণের চেষ্টা করতে পারি। স্ত্রীদের প্রতি তাঁর ছিল গভীর ভালোবাসা। বাচ্চাদের সঙ্গে তিনি প্রায়ই খেলতেন। ঘরের কাজে স্ত্রীদের সাহায্য করার জন্য প্রায়ই তিনি তাদের সাহায্য করতেন। এভাবে তাঁর উদাহরণ
অনুসরণ করে আমরা আমাদের বাসাকে পরিণত করতে পারি শান্তির নীড়ে।
৯. বাসাসংক্রান্ত ইসলামিক বিধানগুলো আমরা জানি যেমন ঘরের গোপন কথা বাইরে না বলা, ঘরে প্রবেশের আগে অনুমতি নেওয়া, অন্যের বাড়িতে উঁকিঝুঁকি না দেওয়া, দিনের নির্দিষ্ট কিছু সময়ে বাবা-মা’র বিছানার ঘরে
সন্তানদের প্রবেশ করতে না দেওয়া এবং রাতে একাকী বাইরে না-থাকা। শেষেরটি
খুবই কৌতূহলউদ্দীপক কেননা, অনেক স্বামীকে ব্যবসা কিংবা কাজের জন্য
মাঝেমধ্যে বাড়ির বাইরে থাকতে হতে পারে। কিন্তু রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এতে নিরুৎসাহিত করেছেন। ইব্ন ‘উমার থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম একা থাকতে নিষেধ করেছেন। তিনি আরও বলেছেন যে, রাতে যেন কেউ একা না থাকে কিংবা একাকী ভ্রমণে না বের হয়। [৮] একা একা রাতে থাকলে সে তো একা থাকবেই, তার স্ত্রী-বাচ্চারাও কোনো নিরাপত্তা ছাড়াই বা সঙ্গীবিহীনভাবে একা পড়ে থাকবে।

image

১০. আমরা আমাদের ঘরে ধার্মিক ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের নিমন্ত্রণ করি
“আমার প্রভু! আমাকে ও আমার বাবা-মাকে ক্ষমা করুন। এবং বিশ্বাসী হিসেবে আমার ঘরে যে প্রবেশ করে তাকেও ক্ষমা করুন। আরও ক্ষমা করুন সব বিশ্বাসী পুরুষ ও নারীদের।” [৯] ঘরে ন্যয়নিষ্ঠ মানুষদের নিয়মিত উপস্থিতি ও তাদের সাথে কথোপকথন প্রভূত কল্যাণ বয়ে আনে। এ ধরনের মানুষেরা কল্যাণকর বিষয়েই বেশি কথা বলবে। কল্যাণকর জ্ঞান ও তথ্যের জন্য তারা হতে পারেন অনন্য উৎস। আমাদের সবসময় এই দু‘আ করা উচিত আল্লাহ যেন আমাদের ন্যায়নিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব দিয়ে
অনুগ্রহ করেন। নাবি সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কেবল বিশ্বাসীদের সাথে সাহচার্য রাখবে। ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ ছাড়া অন্য কেউ যেন তোমার খাবার না খায়।” [১০]

১১. আমাদের ঘরে মন্দ কিছু নেই
আমাদের ঘরে কোনো টেলিভিশন নেই, কোনো হারাম বাদ্যবাজনা আমাদের ঘরে
বাজে না। (শিক্ষামূলক ও ধর্মীয় উদ্দেশ্যে ঘরে টেলিভিশন থাকতে পারে।) ঘরের
দেওয়ালে টাঙানো ছবিগুলোতে কোনো প্রাণীর ছবি নেই। মূর্তি কিংবা
ভাস্কর্যের মতো কিছু ঘরে নেই। ঘরে কুকুর নেই, ধূমপান নিষিদ্ধ। অতিরিক্ত
আড়ম্বর এড়াতে আমাদের ঘরের সাজসজ্জা খুবই সাধারণ। শুধু ভালো কাজেই টেলিফোন কিংবা মোবাইল ব্যবহৃত হয়; পরনিন্দা বা পরচর্চার উদ্দেশ্যে নয়। কেউ বেরাতে এলে, পুরুষ ও নারীদের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা বসার ব্যবস্থা।
উপরোক্ত জিনিসগুলো ঠিকঠাক রাখা না হলে তার খারাপ প্রভাব বাড়ির উপর পড়বেই।
উদাহরণস্বরূপ, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ঘরে ছবি টাঙানো থাকে কিংবা কুকুর থাকে ফেরেশতারা সেই ঘরে প্রবেশ করে না।” [১১]
১২. আমাদের বাড়ির অবস্থানও ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা পালনে সহায়ক
বাসা যদি মাসজিদের আশেপাশে হয় তাহলে বাড়ির পুরুষদের জন্য মাসজিদে সলাত পড়তে খুব সুবিধা। মাসজিদে যদি নিয়মিত হালাকা, ক়ুর’আন শিক্ষা ইত্যাদি কার্যক্রম চলে তাহলে
পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও এতে সহজেই যোগ দিতে পারবে। বাসা এমন জায়গায় নিতে হবে যেন আশেপাশেও মুসলিম পরিবার থাকে। নিকট প্রতিবেশীদের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে; পাপপরায়ণ প্রতিবেশী থেকে দূরে থাকতে হবে। বাসা নেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে নারী ও পুরুষদের জন্য যেন আলাদা বসার ব্যবস্থা থাকে। বাড়ি হতে হবে প্রশস্ত। নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা যেন থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। স্বাস্থপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে হবে।
আপনার স্কোর কত?
উপরের দেওয়া ১২টি পয়েন্টের সাথে মিলিয়ে দেখুন আপনার স্কোর কত?
১০-১২: অভিনন্দন। আপনার ঘর প্রকৃত অর্থেই ইসলামিক ঘর। সঠিক পথেই আছেন আপনি।
৭-৯: ভালো। তবে আপনার ঘরকে প্রকৃত ইসলামি ঘর হিসেবে গড়ে তুলতে আরও
একটু কাজ করতে হবে। আল্লাহর সাহায্যে সেই কাজটা তেমন কঠিন হবে না।
৪-৬: খারাপ। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর কাছ থেকে পুরস্কার লাভের জন্য আপনাকে ও
আপনার পরিবারকে অনেক কাজ করতে হবে। পরিবারের অনেক দিক বদলানোর
দিকে নজর দিতে হবে।
০-৩: খুব খারাপ। খুব বড় ধরনের পরিবর্তন দরকার আপনার ঘরকে ইসলামি ঘর হিসেবে
রূপান্তরিত করার জন্য।
[১] সূরাহ আন-নাহ্ল, ১৬:৮০
[২] মুসলিম
[৩] স়াহ়ীহ় আল-জামি
[৪] স়াহ়ীহ় আল-জামি
[৫] বুখারি
[৬] আহ়মাদ, স়াহ়ীহ় আল-জামি
[৭] মুসলিম
[৮] আহ়মাদ
[৯] সূরাহ নূহ, ৭১:২৮
[১০] আবূ দাঊদ, আত-তিরমিযী
[১১] বুখারি
মূল: ড. আইশা হামদান
অনুবাদ: মাস‘ঊদ শারীফ
সৌজন্যে: সৌজন্যে: সিয়ান পাবলিকেশন, আল-জুমু‘আহ ম্যাগাজিন
islam21c.com থেকে অনূদিত