Daily Archives: মে 9, 2015

পর্দা কী শুধু মেয়েদের জন্য

অনেক ভাই আছেন। সে শুক্রবারে মসজিদে
নামাজ পড়তে যায়, এক সপ্তাহে ৩৫ ওয়াক্তের
মধ্যে ১ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে (রমজানে ব্যতিত)।
কিন্তু ভাবী আবার নামাজ রেগুলার পড়ে। ভাবী
হিজাব/পর্দা করেন। ভাবী যাতে দ্বীন ঠিকমত পালন
করে সেটা ভাইয়া সবসময় খেয়াল রাখে! কিন্তু
ভাইয়ার দ্বীনের কোন খবর নাই, সে ক্লীন-
শেভড, খুব আধুনিক।
এরকম ধ্যান-ধারণা কিন্তু আমরা যতটুকু পর্যবেক্ষণ
করি তার থেকে অনেক বেশি প্রচলিত। ভাই নিজে
গিয়ে সিনেমা হলে সিনেমা দেখে আসে, কিন্তু
বোন এদিক ওদিক করলেই তার ঈমান জেগে
উঠে।
কেমন লাগবে, রাস্তায় কোন ছেলে তাকালে যদি
কাছে গিয়ে বোরখাওয়ালী মেয়েরা বলা শুরু
করে, ওই ব্যাটা তাকাবি তো চোখ কানা করে দিব।
(একটা হাদীসে কারও ঘরে মানে
প্রাইভেসীতে উঁকি দিলে চোখ কানা করে
দেয়ার হুমকি দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে! হিজাব
পড়ার পরেও পুরুষরা যখন বলে এতেও ‘ঠিকমত’
পর্দা হয় নি, কিংবা কোন নারীর পোশাক আশাকের
ব্যপারে মন্তব্য করে, তখন ইচ্ছা করে সত্যি সত্যি
চোখ কানা করে দেই! এই অভদ্রতার অধিকার কে
দিল?)
একটা হাদীসে পড়ছিলাম সেদিন, রাসূল (সা) কখনও
গায়ের জামা খুলতেন না নিজের খুব কাছের ছাড়া
অন্যদের সামনে। ‘আজকালকার ছেলেরা’ যে
কোন উপলক্ষ্যে (গরম লাগা, ক্রিকেট পরবর্তী
উল্লাস, সমুদ্র বিলাস) গায়ের জামা খুলতে একটুও দ্বিধা
করে? কিংবা শার্টের বোতাম খোলা রাখা। অথচ,
রাসুলের সুন্নত কিন্তু পুরুষদের জন্যও ‘ঢিলা ঢালা’
কাপড় চোপড় পড়া। এখন মেয়েরা গজ ফিতা নিয়ে
পুরুষদের কাপড়ের প্রস্থ মেপে মোড়লীপনা
শুরু করলে কেমন লাগতো?
কেমন হতো বোরখা পড়া খালাম্মা টাইপের কেউ
গিয়ে যদি হুমকি দিত, পর্দা পুশিদার ঠিক নাই তোর!
অথবা নিজের চেয়ে বয়সে ছোট কোন
বোরখাওয়ালী মেয়ে ভাব নিয়ে বলতো,
আপনের ভাব সাব দেখে মনে হয় আপনে কাপড়
খুলে ঘুরতে পারলেই বাঁচেন!
দাড়ি নিয়ে তো যথেষ্ট কড়া হাদীস আছে,
ক্লীন শেভড প্রত্যেককে ধরে কিশোরী
তরুনীরা যদি বলা শুরু করতো, আপনের সমস্যা কি?
মুখে দাড়ি নাই কেন?
কেমন লাগতো? খুব শালীন মনে হতো? খুব
স্বাভাবিক মনে হতো?
না, পর্দা নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই।
বরং পুরুষদের পর্দা ইসলামের আরো বেশি
গুরুত্বপূর্ণ। কোরানে পুরুষদের পর্দার কথা
মেয়েদের পর্দার আগে বলা হয়েছে।
পুরুষদের পর্দা মেয়েদের পর্দা থেকে
সেজন্যই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে পুরুষরা
পর্দা করা শুরু করলে মেয়েরা আপনাআপনিই পর্দা
করা শুরু করবে।
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা পবিত্র কোরআনের
►সূরা নূরের ৩০ নাম্বার আয়াতে বলেছেনঃ
“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত
রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে
তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা
করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। ”
►সূরা নূরের ৩১ নাম্বার আয়াতে বলেছেনঃ
“ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের
দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের
হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা
ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন
তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে
এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র,
স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র,
স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী,
যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন
অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো
আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন
তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য
জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই
আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম
হও। ”
কুরআনের যেই জায়গায় মেয়েদের পর্দার
নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সেখানে সবার আগে
ছেলেদের দৃষ্টি সংযত করতে বলা হয়েছে (সূরা
নূরের ৩০ নাম্বার আয়াতে ), তারপরে
মেয়েদের কথা বলেছেন আল্লাহ (সূরা নূরের
৩১ নাম্বার আয়াতে)।
দেখা যাচ্ছে, মেয়েদের হিজাবের চেয়ে
ছেলেদের দৃষ্টি সংবরনকেই আল্লাহ বেশি গুরুত্ব
দিয়েছেন, তাই সেটা আগে বলেছেন!
সুরা নুরের এই আয়াতগুলো দেখলেই বুঝা যায় যে
ছেলেদের পর্দা অন্ততপক্ষে মেয়েদের
পর্দার সমান গুরুত্বপূর্ণ, যদি বেশি না হয়। অথচ
মেয়েদেরকে পর্দার মধ্যে রাখার জন্য
পুরুষদের এত চেষ্টা থাকলেও নিজেদের
ব্যাপারে কোন রাখঢাকই নেই।
আবু সাইদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)
বলেন, “সাবধান, রাস্তার ধারে বসা থেকে বিরত
থাক”। লোকেরা বলল, “ হে আল্লাহর রাসুল,
যেহেতু আমরা কথা বলতে এসেছি, তাই না বসে
উপায় ছিল না”। রাসুল (সাঃ) তখন তাদেরকে বললেন, “
তাহলে তোমরা রাস্তার অধিকারকে পুরা কর”। তারা
বলল,”ইয়া রাসুলুল্লাহ, রাস্তার অধিকার কি?” রাসুল (সাঃ) তখন
তাদেরকে বললেন, “ দৃস্টিকে নত রাখা, অন্যকে
চলার অসুবিধা থেকে বিরত থাকা, সালামের উত্তর
দেওয়া এবং ভালো কাজের আদেশ ও খারাপ
কাজের নিষেধ।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
উপরের হাদিসটা যেসব লোক বখাটেদের
মেয়ে দেখলে উৎপাত করাকে “মেয়েরা পর্দা
কেন করেনা” বলে যুক্তি দেখায় তাদের জন্য
উপযুক্ত জবাব। এম্নিতে রাস্তায় দাড়িয়ে আড্ডা
দিতেই নিষেধ করা হয়েছে, আর যে রাস্তা দিয়ে
মেয়েরা যাতায়াত করে সেখানে দাড়িয়ে শিষ
দেওয়াটা কত জগন্য অপরাধ হতে পারে সেটা তো
কল্পনাই করা যায়না। যদি খুব দরকারে দাড়াতেও হয়,
দৃষ্টি নীচের দিকে রাখতে বলা হয়েছে, যেটা
করলে মেয়ে বেপর্দা না বেগানা নাকি অন্যকিছু
সেটা তো দেখতে পাওয়ারও প্রশ্নই আসেনা।
আবার অনেককে দেখেছি কোন মেয়ে যদি
একটু খোলামেলা কাপড় পড়ে তার নামে যা-তা বলে
বেড়ায়। নিচের আয়াত দেখেন, তাদের জন্য কি
শাস্তি বরাদ্দ রয়েছে।
“যারা সতী-সাধ্বী, নিরীহ ঈমানদার নারীদের প্রতি
অপবাদ আরোপ করে, তারা ইহকালে ও পরকালে
ধিকৃত এবং তাদের জন্যে রয়েছে গুরুতর শাস্তি।“
সুরা নূরঃ আয়াত ২৩
সমাজে নারীরা বেপর্দা হওয়া বা লাক্স-চ্যানেল
আইয়ে নিজেদেরকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন
করিয়ে ব্যাভিচার ছড়ানোটাও সম্পূর্ণভাবে পুরুষের
দোষ। নিচের আয়াত দেখেন, তাদের জন্য কি
শাস্তি বরাদ্দ রয়েছে।
“যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার
প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে
যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন,
তোমরা জান না।“ সুরা নূরঃ আয়াত ১৯
মেয়েদেরকে ধর্মের ষোলআনা পালন
করানোর জন্য বাধ্য করব আর নিজের বেলায়
ধর্মের কোন খোঁজখবর নেই, এটা
সম্পূর্ণভাবে অগ্রনযোগ্য। একজন মুসলমান
নিজের জন্য যা পছন্দ করবে অন্যের জন্যও তাই
পছন্দ করবে।
দেখেন পারেন কিনা, ঢাকার রাস্তায় ১ মাইল হেটে
দেখেন আর যত মেয়ে আসে তাদের দিকে না
তাকিয়ে দৃষ্টি নিচের দিকে করে রাখবেন, সুন্দরী
হোক অসুন্দরি হোক, তাদের দিকে তাকাবেন না।
অত্যন্ত দু:খের সাথে জানাচ্ছি, হাদীস
গ্রন্থগুলোতে মেয়েদের পোশাক আশাক
নিয়ে যত হাদীস আছে, ছেলেদের পোশাক
আশাক, সে সংক্রান্ত নির্দেশাবলী নিয়ে হাদীস
আছে ‘অনেক বেশি!’
“ভাই, শুনেছেন ঠিক মতো”– মেয়েদের
চেয়ে ছেলেদের পোশাক নিয়ে আল্লাহর
রসুল (সাঃ) বেশি চিন্তিত ছিলেন! সব সময়কার সুন্নত
হিসাবে উনার মাথা টুপি, আবার কখনও টুপি ও পাগড়ি দিয়ে
মাথা ঢাকা থাকতো। এক মুঠ দাড়ি দিয়ে মুখের বড় অংশ
আবৃত থাকত। লম্বা ঢিলে ঢালা পোশাক পরেছেন।
টাকনুর উপরে পাজামা/লুঙ্গি পরেছেন।
জীবনে তো নারীর পর্দা নিয়ে অনেক
গবেষনা করেছেন। একবার বুখারী শরীফের
“পোশাক অধ্যায়” পড়ে দেখবেন প্লীজ ।

পর্দা কেমন হবে! আপনার জানার দরকার

প্রসঙ্গ পর্দা: হাত-পা, মুখ খোলা রাখবেন, নাকি
পুরো শরীর ঢাকবেন? দেখি ইসলাম কি বলে?
কুরআন শরীফ হাদীছ শরীফে সব বর্নিত থাকার
পরও কিছু মূর্খ তথা নব্য আবু জাহিল পর্দার বিষয়ে
বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। কেউবা আবার নামাজের হাদীছ
শরীফ শরয়ী পর্দার মূল হুকুমের মধ্যে
প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছে।
নিম্নে এর দলীল ভিত্তিক আলোচনা করা
হলো: কুরআন শরীফে
ﻗُﻞ ﻟِّﻠْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻳَﻐُﻀُّﻮﺍ ﻣِﻦْ ﺃَﺑْﺼَﺎﺭِﻫِﻢْ ﻭَﻳَﺤْﻔَﻈُﻮﺍ ﻓُﺮُﻭﺟَﻬُﻢْ
ﺫَﻟِﻚَ ﺃَﺯْﻛَﻰ ﻟَﻬُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺧَﺒِﻴﺮٌ ﺑِﻤَﺎ ﻳَﺼْﻨَﻌُﻮﻥَ
পবিত্র কুরআন শরীফে মহান আল্লাহপাক এরশাদ
করেন ‘হে নবী (ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)!
মুমিন পুরুষদের বলে দিন, তারা যেন নিজেদের
দৃষ্টি সংযত করে রাখে এবং নিজেদের
লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। এটি তাদের জন্য পূত-
পবিত্র পদ্ধতি। তারা যা কিছু করে, আল্লাহ তা জানেন।
( সুরাঃ নূর, আয়াত- ৩০)
ﻭَﻗُﻞ ﻟِّﻠْﻤُﺆْﻣِﻨَﺎﺕِ ﻳَﻐْﻀُﻀْﻦَ ﻣِﻦْ ﺃَﺑْﺼَﺎﺭِﻫِﻦَّ ﻭَﻳَﺤْﻔَﻈْﻦَ ﻓُﺮُﻭﺟَﻬُﻦَّ
ﻭَﻟَﺎ ﻳُﺒْﺪِﻳﻦَ ﺯِﻳﻨَﺘَﻬُﻦَّ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﺎ ﻇَﻬَﺮَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻭَﻟْﻴَﻀْﺮِﺑْﻦَ ﺑِﺨُﻤُﺮِﻫِﻦَّ
ﻋَﻠَﻰ ﺟُﻴُﻮﺑِﻬِﻦَّ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﺒْﺪِﻳﻦَ ﺯِﻳﻨَﺘَﻬُﻦَّ ﺇِﻟَّﺎ ﻟِﺒُﻌُﻮﻟَﺘِﻬِﻦَّ ﺃَﻭْ ﺁﺑَﺎﺋِﻬِﻦَّ
ﺃَﻭْ ﺁﺑَﺎﺀ ﺑُﻌُﻮﻟَﺘِﻬِﻦَّ ﺃَﻭْ ﺃَﺑْﻨَﺎﺋِﻬِﻦَّ ﺃَﻭْ ﺃَﺑْﻨَﺎﺀ ﺑُﻌُﻮﻟَﺘِﻬِﻦَّ ﺃَﻭْ ﺇِﺧْﻮَﺍﻧِﻬِﻦَّ
ﺃَﻭْ ﺑَﻨِﻲ ﺇِﺧْﻮَﺍﻧِﻬِﻦَّ ﺃَﻭْ ﺑَﻨِﻲ ﺃَﺧَﻮَﺍﺗِﻬِﻦَّ ﺃَﻭْ ﻧِﺴَﺎﺋِﻬِﻦَّ ﺃَﻭْ ﻣَﺎ
ﻣَﻠَﻜَﺖْ ﺃَﻳْﻤَﺎﻧُﻬُﻦَّ ﺃَﻭِ ﺍﻟﺘَّﺎﺑِﻌِﻴﻦَ ﻏَﻴْﺮِ ﺃُﻭْﻟِﻲ ﺍﻟْﺈِﺭْﺑَﺔِ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮِّﺟَﺎﻝِ
ﺃَﻭِ ﺍﻟﻄِّﻔْﻞِ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻟَﻢْ ﻳَﻈْﻬَﺮُﻭﺍ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻮْﺭَﺍﺕِ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀ ﻭَﻟَﺎ
ﻳَﻀْﺮِﺑْﻦَ ﺑِﺄَﺭْﺟُﻠِﻬِﻦَّ ﻟِﻴُﻌْﻠَﻢَ ﻣَﺎ ﻳُﺨْﻔِﻴﻦَ ﻣِﻦ ﺯِﻳﻨَﺘِﻬِﻦَّ ﻭَﺗُﻮﺑُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ
ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺟَﻤِﻴﻌًﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗُﻔْﻠِﺤُﻮﻥ
আর মুমিন মহিলাদের বলে দিন, তারা যেন তাদের
দৃষ্টি সংযত করে রাখে এবং নিজেদের
লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। আর তারা যেন
স্বীয় সাজসৌন্দর্য না দেখায়, তবে যা নিজে
নিজে প্রকাশ হয়ে যায় । তা ছাড়া তারা যেন
তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে।
এবং তারা কারো সামনে তাদের সাজসৌন্দর্য প্রকাশ
করবে না এই মাহরাম আত্মীয়গণ ব্যতীত যথা
স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, ভ্রাতা ভ্রাতুষ্পুত্র,
ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক, অধিকারভুক্ত, বাঁদী,
নারীর প্রতি স্পৃহাহীন সেবক, ওই সব বালক যারা
নারীর গোপনীয় বিষয় সম্পর্কে অবহিত
হয়নি। তারা যেন পথচলার সময় এমন পদধ্বনি না
করে যাতে তাদের অপ্রকাশিত সৌন্দর্য পদধ্বনিতে
প্রকাশিত হয়ে পড়ে। ‘হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই
আল্লাহর কাছে তওবা কর যাতে তোমরা সফলকাম
হও।’ (সুরাঃ নূর, আয়াত-৩১)।
লক্ষনীয়, আয়াত শরীফ এই অংশে আল্লাহ পাক
ইরশাদ করেন ﻭَﻟْﻴَﻀْﺮِﺑْﻦَ ﺑِﺨُﻤُﺮِﻫِﻦَّ ﻋَﻠَﻰ ﺟُﻴُﻮﺑِﻬِﻦَّ
“তারা যেন বক্ষদেশে নিজদের ওড়না ফেলে
রাখে” । ‘খুমুরুন’ শব্দটি ‘খিমার’ শব্দের বহুবচন। ‘খিমার’
ঐ কাপড়কে বলা হয় যা নারীরা মাথায় ব্যবহার
করে এবং তাদ্বারা মুখ, গলা ও বক্ষ পানি ভরা কুপের
ন্যায় আবৃত হয়ে যায়। সুতরাং,মুখ, গলা আবৃত করার
নির্দেশের দ্বারা চেহারা আবৃত করার র্নিদেশ
প্রমাণিত হয়। কারণ, নারীর মুখমন্ডল তার যাবতীয়
রূপ ও সৃষ্টিগত সৌন্দর্যের মূল উৎস ও আকর্ষণ।
কেউ যখন বিয়ের জন্য পাত্রী দেখে তখন
মুখই দেখে। তাহলে এ মুখ কিভাবে পরপূরুষের
সামনে উম্মুক্ত রাখা যেতে পারে?
মূলত: খুমুরুন শব্দ দ্বারা মুখ থেকে বক্ষদেশ
পর্যন্ত ঢেকে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
মাথার ওড়না দিয়ে বক্ষদেশ পর্যন্ত ঢাকতে হলে
অবশ্যই মুখ ঢাকতে হবে। যা নিম্মে বর্নিত দলীল
সমূহ দ্বারা আরো স্পষ্ট হবে।
ﻭَﻗَﺮْﻥَ ﻓِﻲ ﺑُﻴُﻮﺗِﻜُﻦَّ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺒَﺮَّﺟْﻦَ ﺗَﺒَﺮُّﺝَ ﺍﻟْﺠَﺎﻫِﻠِﻴَّﺔِ ﺍﻟْﺄُﻭﻟَﻰ
মহান আল্লাহপাক এরশাদ করেন, ‘(হে নারীগণ!)
তোমরা আপন গৃহে অবস্থান করো এবং
জাহেলিয়াতের যুগের মতো সাজসজ্জা সহকারে
অবাধে চলাফেরা করো না।’ (সূরা আহজাবঃ
আয়াত-৩৩)
ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺳَﺄَﻟْﺘُﻤُﻮﻫُﻦَّ ﻣَﺘَﺎﻋًﺎ ﻓَﺎﺳْﺄَﻟُﻮﻫُﻦَّ ﻣِﻦ ﻭَﺭَﺍﺀ ﺣِﺠَﺎﺏٍ ﺫَﻟِﻜُﻢْ
ﺃَﻃْﻬَﺮُ ﻟِﻘُﻠُﻮﺑِﻜُﻢْ ﻭَﻗُﻠُﻮﺑِﻬِﻦَّ
মহান আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘আর যখন তাদের
কাছে তোমরা কিছু চাইবে, তখন (তারা) তোমাদের
দৃষ্টির অন্তরালে হিজাব বা পর্দার ভেতরে অবস্থান
করবে, আর তোমরা তাদের কাছে পর্দার বাইরে
থেকে চাইবে। তোমাদের এ কাজ তোমাদের
অন্তর ও তাদের অন্তরকে কুচিন্তার আবরণ
থেকে উত্তমভাবে পাক-পবিত্র রাখার উপায়
হবে।’ (সূরা আহজাবঃ আয়াত-৫৩)।
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﻗُﻞ ﻟِّﺄَﺯْﻭَﺍﺟِﻚَ ﻭَﺑَﻨَﺎﺗِﻚَ ﻭَﻧِﺴَﺎﺀ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ
ﻳُﺪْﻧِﻴﻦَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻦَّ ﻣِﻦ ﺟَﻠَﺎﺑِﻴﺒِﻬِﻦَّ ﺫَﻟِﻚَ ﺃَﺩْﻧَﻰ ﺃَﻥ ﻳُﻌْﺮَﻓْﻦَ ﻓَﻠَﺎ
ﻳُﺆْﺫَﻳْﻦَ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭًﺍ ﺭَّﺣِﻴﻤًﺎ
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরো বলেন, ‘হে নবী
(ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)! স্ত্রীগণকে
বলে দিন যে তারা যেন চাদরের কিছু অংশ
নিজেদের মুখের ওপর টেনে দেয়, এতে
তাদের চেনা সহজতর হবে ফলে তাদের কেউ
উত্ত্যক্ত করবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম
দয়ালু।’ (সূরা আহজাবঃ আয়াত-৫৯)
উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালমা আলাইহাস সালাম
থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘আমি এবং মায়মুনা
আলাইহাস সালাম রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম
-এর কাছে থাকাকালীন হঠাৎ অন্ধ সাহাবী আবদুল্লাহ্
ইবনে উম্মে মাকতুম তথায় আগমন করলেন। তিনি
আমাদের বললেনঃ আপনারা কাছে পর্দা করো। এই
ঘটনার সময়কাল ছিল পর্দার আয়াত অবতীর্ণ
হওয়ার পর।
উম্মুল মু’মিনীন উম্মে সালমা আলাইহাস সালাম আরজ
করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া
সাল্লাম তিনি তো অন্ধ, আমাদের দেখতে পাবেন
না এবং আমাদের চেনেনও না। রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহিওয়া সাল্লাম বললেন, আপনারা তো অন্ধ নও,
আপনারা উনাকে দেখছেন। (আবু দাউদ শরীফ,
তিরমিযী শরীফ)
হজরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে
বর্ণিত রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ
করেন, ‘হে আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রথম
দৃষ্টির পর দ্বিতীয় দৃষ্টি যেন নিক্ষেপ করা না
হয়। প্রথমটি ক্ষমার যোগ্য কিন্তু দ্বিতীয়টি নয়।’
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা
আলাইহাসসালাম বলেন,
ﻛﺎﻥ ﺍﻟﺮﻛﺒﺎﻥ ﻳﻤﺮﻭﻥ ﺑﻨﺎ ﻭ ﻧﺤﻦ ﻣﺤﺮﻣﺎﺕ ﻣﻊ ﺍﻟﺮﺳﻮﻝ ﻓﺈﺫﺍ
ﺣﺎﺫﻭﻧﺎ ﺳﺪﻟﺖ ﺇﺣﺪﺍﻧﺎ ﺟﻠﺒﺎﺑﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﻭﺟﻬﻬﺎ ﻣﻦ ﺭﺃﺳﻬﺎ ﻓﺈﺫﺍ
ﺟﺎﻭﺯﻧﺎ ﻛﺸﻔﻨﺎﻩ .
আমরা রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে
এহরাম অবস্থায় ছিলাম, উষ্ট্রারোহী পুরুষরা
আমাদের পার্শ্বদিয়ে অতিক্রম কালে আমাদের
মুখামুখি হলে আমরা মাথার উপর থেকে চাদর টেনে
চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিতাম। তারা আমাদেরকে
অতিক্রম করে চলে গেলে আমরা মুখমন্ডল
খুলে দিতাম। (আহমাদ শরীফ, আবু দাউদ শরীফ,
ইবনে মাজাহ শরীফ)
সহিহ বুখারি ও মুসলিমে শরীফে উম্মুল মু’মিনীন
হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা আলাইহাসসালাম হতে বর্ণিত
আছে:
ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﺼﻠﻲ ﺍﻟﻔﺠﺮ ﻣﻌﻪ ﻧﺴﺎﺀ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﺎﺕ
ﻣﺘﻠﻔﻌﺎﺕ ﺑﻤﺮﻭﻃﻬﻦ ﺛﻢ ﻳﺮﺟﻌﻦ ﺇﻟﻰ ﺑﻴﻮﺗﻬﻦ ﻣﺎ ﻳﻌﺮﻓﻬﻦ
ﺃﺣﺪ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺱ .
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার
ফজরের সালাতে কিছু সংখ্যক মহিলা চাদর পরিহিত
অবস্থায় পরিপূর্ণ পর্দা করত: তাঁর পিছনে সালাত
আদায় করার উদ্দেশ্যে মসজিদে আসতেন। সালাত
শেষে আপন আপন গৃহে ফেরার পথে
তাদেরকে চেনা যেত না। উল্লেখ্য, যদি মুখ
খোলা থাকতো তাহলে অবশ্যই চেনা যেত।
আরেকটা বিষয়: মহিলাদের মসজিদে গমন
পরবর্তীতে নিষিদ্ধ হয়।
হাবীবুল্লাহ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ করেন: ﻣﻦ ﺟﺮ ﺛﻮﺑﻪ ﺧﻴﻼﺀ ﻟﻢ ﻳﻨﻈﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﺇﻟﻴﻪ
ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ
“যে ব্যক্তি অহংকার বশে (পায়ের গোড়ালীর
নীচে) কাপড় ঝুলিয়ে চলবে আল্লাহ পাক
কিয়ামত দিবসে তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিপাত করবেন
না”।
উম্মুল মু’মিনীন উম্মে সালামা আলাইহাসসালাম জিজ্ঞাসা
করলেন, নারীগণ চাদরের নিম্নাংশ কতটুকু পরিমাণ
ঝুলিয়ে রাখবে? রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেন, অর্ধহাত পরিমাণ। উম্মুল মু’মিনীন
উম্মে সালামা আলাইহাসসালাম আবারও প্রশ্ন করলেন
এ অবস্থায় মহিলার পা দৃষ্টিগোচর হবে। তদুত্তরে
রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-
তাহলে একহাত পরিমাণ ঝুলিয়ে রাখবে এর অধিক
নয়।
এ হাদীসে প্রমাণিত হল যে, মহিলার পা আবৃত রাখা
ওয়াজিব, যা উম্মুল মু’মিনীন উম্মে সালামা
আলাইহাসসালাম এবং মহিলা ছাহাবায়ে কিরাম রাদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহা উনাদের অজানা ছিল না। আর এতে
কোনো সন্দেহ নেই যে, মহিলার পা দর্শনে
যতটুকু ফিৎনার আশংকা রয়েছে তার চাইতে হাত ও
মুখমন্ডল দর্শনে ফিৎনার আশংকা বেশি । অতএব পা
দর্শন যা ফিৎনার নগণ্যতম মাধ্যম তাতে সতর্কবাণীর
ফলে হাত ও মুখমন্ডল দর্শন যা সন্দেহাতীতভাবে
অধিকতর ফিৎনাস্থল তার বিধান স্পষ্ট হয়ে গেল।
আপনারা ভালোভাবে অবগত আছেন যে,
প্রজ্ঞাভিত্তিক সুসম্পূর্ণ নিখুত শরিয়তে মহিলার পা যা
ফিৎনার নগণ্যতম পন্থা তাতে পর্দার নির্দেশ দিয়ে
হাত ও মুখমন্ডল যা ফিৎনার মূল উৎস তা উম্মুক্ত রাখার
অনুমতি প্রদান করবে, তা কস্মিণকালেও হতে পারে
না। অতএব প্রমানিত হলো মহিলাদের মুখমন্ডল, হাত,পা
সবঅঙ্গই পর্দার অন্তর্ভূক্ত।
উল্লেখ্য, অনেকে বুখারী শরীফের দলীল
দিয়ে থাকে যে, মুখমন্ডল, হাত-পা খোলা রাখা
যায়েজ । কিন্তু সেটা হলো নামাজের হাদীছ
শরীফ একমাত্র নামাজের জন্যে প্রযোজ্য।
নামাজের মধ্যে মুখমন্ডল হাত-পা মুখ খোলা রাখা
যেতে পারে। কিন্তু নামাজের হাদীছ শরীফ
অন্যস্থানে খাটালে হবে না। নামাজে এক নিয়ম বাহির
এক নিয়ম। আরেকটা বিষয় উল্লেখ্য নামাজ
যেহেতু মহিলারা ঘরে পড়বে সেহেতু হাত , মুখ,
পা খোলা তার জন্য জায়েজ। কিন্তু যখনই সে ঘর
থেকে বের হবে অথবা পর পূরূষের সামনে
দিয়ে চলতে হবে তখনই তাকে পুরো
শরীরের পর্দা করতে হবে। মহিলাদের
পড়াশোনাও করতে হবে। অবস্থানুযায়ী যাদের
বিশেষ জরুরী তারা চাকুরী ব্যবসাও করতে
পারবে। তবে অবশ্যই সেটা পুরো শরয়ী পর্দার
মধ্যে থেকে করতে হবে।