Daily Archives: মে 6, 2015

বিয়ে করলে কী কী উপকার পাবেন??

sami%2Bistiriহজরত আবু নাজি রা. থেকে বর্ণিত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেন, মুখাপেক্ষী! মুখাপেক্ষী! ঐ পুরুষ যার
স্ত্রী নেই। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করেন, যদি
তার অনেক সম্পদ থাকে তবুও কি সে
মুখাপেক্ষী? রাসুলুল্লাহসাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেন, যদিও তার অনেক সম্পদ
থাকে তবুও সে মুখাপেক্ষী। মুখাপেক্ষী!
মুখাপেক্ষী! ঐ নারী যার স্বামী নেই।
সাহাবগণ জিজ্ঞেস করেন, যদি তার অনেক
সম্পদ থাকে তবুও কি সে মুখাপেক্ষী?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেন, যদিও তার অনেক সম্পদ থাকে তবুও সে
মুখাপেক্ষী।
কেননা সম্পদের উপকারিতা -প্রশান্তি ও
চিন্তামুক্ত থাকা- সে পুরুষের ভাগ্যে জুটে
না যার স্ত্রী নেই। সে নারীর ভাগ্যেও জুটে
না যার স্বামী নেই। বাস্তব অভিজ্ঞতা
থেকে জানা যায়, বিয়েতে জাগতিক ও
পরকালীন অনেক বড় বড় উপকার রয়েছে।
[হায়াতুল মুসলিমিন, পৃষ্ঠা-১৮৭।]
বিয়ে আল্লাহর বিশেষ দান বা উপহার।
বিয়ের দ্বারা জাগতিক জীবন ও ধর্মীয়
জীবন দুটিই ঠিক হয়ে যায়। মন্দ চিন্তা ও
অস্থিরতা থাকে না। সবচেয়ে বড় উপকার
হলো, অশেষ নেকি অর্জন। কেননা স্বামী-
স্ত্রী একত্রে বসে ভালোবাসার কথা বলা,
হাসি-তামাশা করা নফল নামাজ পড়ার
চেয়েও উত্তম। [বেহেশতি জেওয়ার, খন্ড-৪।]
হজরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
নারীকে বিয়ে করো সে তোমার জন্য সম্পদ
টেনে আনবে। সম্পদ টেনে আনার উদ্দেশ্য
হলো, স্বামী-স্ত্রী দু’জন বুঝমান ও একে
অপরের কল্যাণকামী হয়ে থাকে। স্বামী এ
কথা স্মরণ রাখে, আমার দায়িত্বে খরচ বেড়ে
গেছে তখন বেশি বেশি উপার্জন করার
চেষ্টা করে। নারীও এমন কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ
করে যা পুরুষ গ্রহণ করতে পারে না। ফলে
তারা প্রশান্তি ও চিন্তামুক্ত হতে পারে।
আর সম্পদের মূল উদ্দেশ্যই এটি। হায়াতুল
মুসলিমিন।
হজরত মাকাল ইবনে ইয়াসার রা. থেকে
বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন, তোমরা অধিক সন্তান
প্রসবকারী নারীকে বিয়ে করো। কেননা
আমি তোমাদের অধিক্যতা দ্বারা অন্যান্য
উম্মতের উপর গর্ব করবো যে, আমার উম্মত
এতো বেশি। [আবু দাউদ, নাসায়ী। হায়াতুল
মুসলিমিন, পৃষ্ঠা-১৮৯]
মানুষের ভেতরে যে জৈবিক চাহিদা থাকে
যদি তা পূরণের একটি বৈধ মাধ্যম না থাকে
তবে সে তা যথেচ্ছা পূরণ করবে। তার থেকে
নির্লজ্জতা প্রকাশ পাবে। এজন্য শরিয়ত
বিয়ে বৈধ করে মানুষের জৈবিক চাহিদা
পূরণের একটি বৈধ মাধ্যম নির্ধারণ করেছেন।
বিয়ের বৈধতা প্রমাণ করে শরিয়ত মানুষের
বুদ্ধি ও বিবেকের তুলনায় অধিক
কল্যাণকামী। বিবেকের নিকট প্রশ্ন করা
হলে তা বিয়েকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দিবে
না। কেননা একজন অপরিচিত পুরুষের সামনে
একজন নারী কিভাবে বিবস্ত্র হবে।
বিবেকের বিচারে যা সম্পূর্ণ নিন্দনীয়। তবে
বিবেকের এই বিচারকে গুরুত্ব দিলে বা সে
অনুযায়ী কাজ করলে অনেক রকম ফেৎনা
বেড়ে যাবে। এখন একজন অপরিচিত নারী-
পুরুষ বিবস্ত্র হচ্ছে। জানা নাই তখন কতো
নারী-পুরুষ পরস্পরের সামনে বিবস্ত্র হবে।
কেননা একজন নারী বা পুরুষ কতোক্ষণ ধৈর্য্য
ধারণ করতে পারবে? নিজেদের কাম চাহিদা
দমন করে রাখবে? এই পরিণতির দিকে লক্ষ
রেখে ইসলামি শরিয়ত বিয়ে অনুমোদন
করেছে। যাতে মানুষের চাহিদা পূরণের
নির্ধারিত মাধ্যম থাকে। সমাজে বিশৃংখলা
ছড়িয়ে না পরে। ইসলামি শরিয়ত খোদা
প্রদত্ত ঐশী হওয়ার প্রমান হলো, তার দৃষ্টি
সর্বদা পরিণতির দিকে। যে আইন ও নিয়ম
মানুষের মেধা প্রসূত তার দৃষ্টি পরিনতিতে
আবদ্ধ থাকে না। [হুকুকুল জাওযাইন,
পৃষ্ঠা-১৫৪। রফউল আলবাস]
স্বাভাবিকভাবে বিবেক লজ্জাশীল হওয়া
কামনা করে। আর বিয়ে নির্লজ্জ বলে মনে
হয়। কিন্তু শরিয়ত বিয়ের বিধান প্রণয়ন
করেছে লজ্জাকে রক্ষা করতে। কারণ যদি
এক স্থানেও মানুষ লজ্জা পরিহার না করে।
তবে সমগ্র মানব সভ্যতা নির্লজ্জ হয়ে যাবে।
[হুকুকুল জাওযাইন, পৃষ্ঠা-১৫৬]
মাওলানা মিরাজ রহমান

বাসর রাতে কী করবেন!!! স্ত্রীর সাথে কী কী করবেন.

 

20150921115553.jpg

১. প্রশ্ন : বাসর রাতে নববধু কিভাবে সজ্জিত হবে?

উত্তর : নববধু মেহেদি ব্যবহার করবে,
অলংকার পরবে এবং সধ্যমত শরীয়ত সম্মত
উপায়ে সেজেগুজে উত্তম পোশাক-
পরিচ্ছেদে সজ্জিত হবে। (দেখুন- আহকামে
জিন্দেগী)
২. প্রশ্ন : বাসর ঘরে প্রবেশ করে কোন
নামাজ পড়বে কি না?
উত্তর : পুরুষ বাসর ঘরে প্রবেশ করতঃ নববধুকে
সহ দুই রাকআত (শুকরানা) নামায পড়বে।
(দেখুন- শিরআতুল ইসলাম, আহকামুল ইসলাম)
৩. প্রশ্ন : নামায পড়ার পর কি করবে?
উত্তর : অতঃপর স্ত্রীর কপালের উপরিস্থিত
চুল ধরে বিসমিল্লাহ বলে এই দুআ পাঠ করা
সুন্নাত-(বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি
আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা যুবিলাত
আলাইহি, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররি হা
ওয়া শাররি মা যুবিলাত আলাইহি) (দেখুন-
ইমাদাদুল ফাতওয়া, আহকামুল ইসলাম)
৪. প্রশ্ন : বাসর ঘরে ঢুকে নামায ও দোয়া
পড়ার পর আর কোন আমল আছে কি না?
উত্তর : বিভিন্ন ইসলামী কিতাবে বাসরঘরে
ঢুকে উপরোক্ত আমলগুলো করতে বলা হয়েছে।
এরপর স্বামী-স্ত্রী নিজেদের মত নিজেরা
পরিচিত হতে থাকবে। তবে প্রথমে স্বামী
মহর বিষয়ক আলোচনা করে নিবে। তা পূর্ণ
আদায় না করে থাকলে স্ত্রী থেকে সময়
চেয়ে নিবে। (সূত্র- আহকামুল ইসলাম)
৫. প্রশ্ন : সংগম শুরু করার পূর্বে সর্বপ্রথম
কি করতে হবে?
উত্তর : সংগম শুরু করার পূর্বে সর্ব প্রথম নিয়ত
সহীহ করে নেয়া; অর্থাৎ, এই নিয়ত করা যে,
এই হালাল পন্থায় যৌন চাহিদা পূর্ণ করার
দ্বারা হারামে পতিত হওয়া থেকে রক্ষা
পাওয়া যাবে, তৃপ্তি লাভ হবে এবং তার
দ্বারা কষ্ট সহিষ্ণু হওয়া যাবে, ছওয়াব
হাছেল হবে এবং সন্তান লাভ হবে। (দেখুন-
আহকামে জিন্দেগী, আহকামুল ইসলাম)
৬. প্রশ্ন : অনেকে বলে বাসর রাতে স্ত্রীর
সাথে সহবাস করা অনুচিত, কথাটি ঠিক কি
না?
উত্তর : না, এধরণের কথা ঠিক নয়, এ সময় যে
কোন উপভোগের জন্য স্বামী-স্ত্রী পূর্ণ
স্বাধীন। তারা সন্তুষ্টচিত্তে যে কোন কাজ
করতে পারে। তবে অবশ্যই প্রথমরাত হিসেবে
একে অপরের চাহিদার প্রতি লক্ষ রাখা
উচিত। (সূত্র- আহকামুল ইসলাম, আহমাকে
জিন্দেগী)
৭. প্রশ্ন : সংগমের শুরুতে কোন দোয়া
পড়তে হবে?
উত্তর : সংগমের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলে
কার্য শুরু করা। তারপর শয়তান থেকে পানাহ
চাওয়া। উভয়টিকে একত্রে এভাবে বলা যায়-
বাংলা উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা
জান্নিবনাশ শাইতানা ওয়া জান্নিবিশ
শাইতানা মা রাযাকতানা। অর্থ : আমি
আল্লাহর নাম নিয়ে এই কাজ আরম্ভ করছি।
হে আল্লাহ, শয়তানকে আমাদের থেকে দূরে
রাখ এবং যে সন্তান তুমি আমাদের দান
করবে তার থেকেও শয়তানকে দূরে রাখ।
(দেখুন- আহকামে জিন্দেগী)
৮. প্রশ্ন : সংগমের বিশেষ কিছু আদব ও
বিধি-নিষেধ জানতে চাই?
উত্তর : সংগমের কিছু আদব ও নিয়ম নিন্মরূপ-
কোন শিশু বা পশুর সামনে সংগমে রত না
হওয়া, পর্দা ঘেরা স্থানে সংগম করা, সংগম
শুরু করার পূর্বে শৃঙ্গার (চুম্বন, স্তন মর্দন
ইত্যাদি) করবে। বীর্য, যৌনাঙ্গের রস
ইত্যাদি মোছার জন্য এক টুকরা কাপড় রাখা,
সংগম অবস্থায় বেশী কথা না বলা, বীর্যের
ও স্ত্রীর যৌনাঙ্গের প্রতি দৃষ্টি না করা,
সংগম শেষে পেশাব করে নেয়া, এক সংগমের
পর পুনর্বার সংগমে লিপ্ত হতে চাইলে
যৌনাঙ্গ এবং হাত ধুয়ে নিতে হবে,
বীর্যপাতের পরই স্বামীর নেমে না যাওয়া
বরং স্ত্রীর উপর অপেক্ষা করা, যেন স্ত্রীও
তার খাহেশ পূর্ণ মাত্রায় মিটিয়ে নিতে
পারে, সংগমের পর অন্ততঃ বিছুক্ষণ ঘুমানো
উত্তম, জুমুআর দিনে সংগম করা মুস্তাহাব,
সংগমের বিষয় কারও নিকট প্রকাশ করা
নেষেধ, এটা একদিকে নির্লজ্জতা,
অন্যদিকে স্বামী/স্ত্রীর হক নষ্ট করা, সংগম
অবস্থায় স্ত্রী-যোনীর দিকে নজর না দেয়া,
তবে হযরত ইবনে ওমর (রা.) সংগম, অবস্থায়
স্ত্রী-যোনীর দিকে দৃষ্টি দয়া উত্তেজনা
বৃদ্ধির সহায়ক বিধায় এটাকে উত্তম বলতেন।
(দেখুন- আহকামে জিন্দেগী)
৯. প্রশ্ন : কোন কোন অবস্থায় স্ত্রীর সাথে
সংগম করা যাবে না?
উত্তর : নিম্নোক্ত অবস্থায় স্ত্রীর সাথে
সংগম করা যাবে না। স্ত্রীর মাসিক বা
প্রসবকালীন স্রাব চলা কালে। এতেকাফ
অবস্থায়। রোজার দিনের বেলায়। এহরাম
অবস্থায়। স্ত্রীর পিছনের রাস্তা দ্বারা।
(দেখুন- স্বামী-স্ত্রীর মধুর মিলন, আহকামে
জিন্দেগী)
১০. প্রশ্ন : সংগম অবস্থায় স্ত্রীর যোনীর
দিকে নজর দেয়া যাবে কি না
উত্তর : সংগম অবস্থায় স্ত্রী-যোনীর দিকে
নজর না দেয়া। তবে হযরত ইবনে ওমর (রা.)
সংগম, অবস্থায় স্ত্রী-যোনীর দিকে দৃষ্টি
দয়া উত্তেজনা বৃদ্ধির সহায়ক বিধায় এটাকে
উত্তম বলতেন। (সূত্র – শরহুন নুকায়া ও হিদায়া)
১১. প্রশ্ন : বীর্যপাতের সময় কোন দোয়া
পড়বে?
উত্তর : বীর্যপাতের সময় নিম্নোক্ত দুআটি
পড়বে- বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লা
তাজআল লিশ্শাইতানি ফিমা রাযাকতানী
নাসীবান। অর্থ : হে আল্লাহ, যে সন্তান তুমি
আমাদেরকে দান করবে তার মধ্যে শয়তানের
কোন অংশ রেখ না। (দেখুন- আহকামে
জিন্দেগী)
১২. প্রশ্ন : সংগম অবস্থায় স্ত্রীর যোনী
স্বামী চোষতে পারবে কি না? এবং
স্বামীর লিঙ্গ স্ত্রী চোষতে পারবে কি
না?
উত্তর : সংগম অবস্থায় স্বামী স্ত্রী একে
অপরের লজ্জাস্থানকে চোষা এবং মুখে
নেওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ, এবং মাকরুহ ও
গুনাহের কাজ। এটা কুকুর, গরু, বকরী ইত্যাদি
প্রানীর স্বভাবের মত। তাই এ কাজ থেকে
অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। চিন্তা করে দেখুন
যে মুখে পবিত্র কালিীমা পড়া হল, কুরআন
শরীফ তিলাওয়াত করা হয়, দরুদ শরীফ পড়া হয়,
তাকে এমন নিকৃষ্ট কজে ব্যবহার করতে মন
কিভাবে চায়। তাই এ কাজ মুমিনের কাজ
হতে পারে না। (দেখুন- ফাতাওয়ায়ে
হিন্দিয়া ও ফাতাওয়ায়ে রহীমিয়া,
আহকামে জিন্দেগী)
১৩. প্রশ্ন : দাঁড়িয়ে সহবাস করা যাবে কি
না?
উত্তর : হ্যাঁ, দাঁড়িয়েও সহবাস করা যাবে।
যারা বলে দাঁড়িয়ে সহবাস করা যায় না
তাদের কথা ঠিক নয়। তাই ঐ কথায় কান দেয়া
যাবে না। (দেখুন- ইতহাফুস সাদাতিল
মাত্তাকীন, আল কাউসার, আহকামে
জিন্দেগী)
গ্রন্থনা ও সম্পাদনায় : মাওলানা মিরাজ
রহমান