Monthly Archives: সেপ্টেম্বর 2014

ঈদুল আদ্বহা ও কুরবানি ৬

ঈদুল আদ্বহা ও কুরবানী।

মুহাদ্দিস রবিউল বাশার।

(পুর্ব প্রকাশিত হওয়ার পর)

পুর্বোক্ত সুরা আসসাফফাতের ১০২ থেকে ১০৭
আয়াত পর্যন্ত কয়েকটি শিক্ষা পাওয়া যায়,
যা সংক্ষিপ্তভাবে পেশ করা হল।
(ক) নাবীরাসুলগনের (আঃ) স্বপ্ন
ওহী এবং সত্য। হযরত ইবরাহীম
(আঃ)সন্তানকে যবেহ করতে দেখার স্বপ্ন
আল্লাহর ওহী বলে ইবরাহীম (আঃ) এবং হযরত
ইসমাইল (আঃ) উভয়ই মনে করেন।
(খ) আল্লাহর নির্দেশ পালনকে সহজ করার
জন্য কিশোর বয়সের পুত্রের সাথে পরামর্শ
করেন। এবং বলেন, আমার স্বপ্ন
বাস্তবায়নের ব্যাপারে তোমার অভিমত কি?
(গ) হযরত ইসমাইল (আঃ) নিজের অভিমত ব্যাক্ত
করেন, এ স্বপ্ন মুলত আল্লাহর নির্দেশ,
অতএব, হে পিতা, আপনি আল্লাহর নির্দেশ
পালন করুন।
(ঘ) ভবিষ্যতে ঘটবে এমন কাজের
ক্ষেত্রে “আল্লাহ যদি ইচ্ছা করেন
“মুমিনের বলা উচিৎ। তাই ইসমাইল (আঃ) বলেন,
আল্লাহ ইচ্ছা করলে, অচিরেই
আপনি আমাকে ধৈয্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত
পাবেন।
(ঙ) তিনি একথা বলেন নি যে,
আপনি আমাকে ধৈয্যশীল পাবেন। বরং বলেন,
আপনি আমাকে ধৈয্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত
পাবেন। একথা অহংকারমুক্ত বিনয়ী কথা।
ধৈয্যশীল একা তিনি নন। অনেক ধৈয্যশীল
আছেন, তিনি তাদের একজন।
(চ) তিনি পুত্রকে কাত করে শোয়ান, যাতে তার
মুখ দেখে যবেহ করতে বাধা না হয়।
(ছ) হযরত ইবরাহীম (আঃ) যখন যবেহ করার
পুর্ন প্রস্তুতি নেন, তখন আল্লাহ ডাক
দিয়ে বলেন, হে ইবরাহীম, তুমি তোমার
স্বপ্নকে সত্যায়িত করেছ।
তিনি স্বপ্নে দেখেন যে, তিনি পুত্র যবেহ
করছেন। তিনি পুত্র যবেহ করেছেন
স্বপ্নে দেখেননি! স্বপ্নের নির্দেশ পালন
হয়ে গেছে।
(ছ) যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায়
সুন্দরভাবে কাজ সম্পাদন করে, তাদের
দুনিয়ার কষ্টও লাঘব করেন। আখিরাতের
মার্যাদা আছেই। ইবরাহীম (আঃ) আন্তরিকতার
সাথে আল্লাহর নির্দেশ করেন, তাই আল্লাহ
তাকে দুনিয়ায় সন্তান হারানোর মত কষ্ট
থেকে বাচান।
(জ) আল্লাহ সন্তান কুরবানীর
বিনিময়ে গৃহপালিত পশু কুরবানীর
রীতি স্থায়ীভাবে চালু করেন।
কুরবানীর তিনদিন পশু কুরবানীর
মাধ্যমে সবচেয়ে প্রিয় ব্যাক্তি বা বস্তু
আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করার
শিক্ষা নেবে মুমিন মুসলিম ব্যাক্তি। এখন
পশু কুরবানী করছি। প্রয়োজন হলে আল্লাহর
জন্য, আল্লাহর দ্বীনের জন্য, নিজের
সবচেয়ে প্রিয় ব্যাক্তি, বস্তু
এমনকি সর্বোস্ব বিলিয়ে দেব।
ﺍﻥ ﺻﻠﻮﺗﻲ ﻭﻧﺴﻜﻲ ﻭﻣﺤﻴﺎﻱ ﻭﻣﻤﺎﺗﻲ ﻟﻠﻪ ﺭﺏ
ﺍﻟﻌﺎﻟﻤﻴﻦ
অর্থ নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কুরবানী,
আমার জীবন এবং আমার মৃত্যু বিশ্বের
প্রভু আল্লাহর জন্য। (সুরা আল আনআম, আয়াত
নং ১৬২)(চলবে)

ঈদুল আদ্বহা ও কুরবানি ৫

ঈদুল আদ্বহা ও কুরবানী।

মুহাদ্দিস রবিউল বাশার.

(পুর্ব প্রকাশিত হওয়ার পর)

হাদীসে বর্নিত হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর
সুন্নাহ কি?
সমস্ত ভালবাসার উপর আল্লাহর ভালবাসার
প্রাধান্য দেওয়াই হলো ইবরাহীম (আঃ) এর
সুন্নাহ। আল্লাহর জন্য সবচেয়ে প্রিয় ও
অধিক ভালবাসার ব্যাক্তি ও বস্তু উৎসর্গ
করাই হলো হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর সুন্নাহ।
এটাই ইসলামের মুলনিয়ম। এজন্যই
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
ﺛﻼﺙ ﻣﻦ ﻛﻦ ﻓﻴﻪ ﻭﺟﺪ ﺣﻼﻭﺓ ﺍﻻﻳﻤﺎﻥ ﺍﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﺍﻟﻠﻪ
ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ﺍﺣﺐ ﺍﻟﻴﻪ ﻣﻤﺎ ﺳﻮﺍﻫﻤﺎ ﻭﺍﻥ ﻳﺤﺐ ﺍﻟﻤﺮﺃ
ﻻﻳﺤﺒﻪ ﺍﻻ ﻟﻠﻪ ﻭﺍﻥ ﻳﻜﺮﻩ ﺍﻥ ﻳﻌﻮﺩ ﻓﻲ ﺍﻟﻜﻔﺮ ﺑﻌﺪ ﺍﻥ
ﺍﻧﻘﺬﻩ ﺍﻟﻠﻪ ﻛﻤﺎ ﻳﻜﺮﻩ ﺍﻥ ﺑﻘﺬﻑ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺎﺭ
অর্থ তিনটি গুন যার মধ্যে থাকবে,
সে ঈমানের স্বাদ অনুভব করবে। (১) আল্লাহ
ও তাঁর রাসুল অন্যান্যদের চেয়ে তার
কাছে অধিক প্রিয় হওয়া।
(২)কাউকে ভালবাসবে, আল্লাহর
উদ্দেশ্যে ছাড়া অন্য
উদ্দেশ্যে ভালবাসবে না। এবং (৩)আল্লাহ
কুফরী থেকে বাচানোর পর কুফরীত
ফিরে যাওয়াকে এমনভাবে অপছন্দ করা যেমন
আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপছন্দ করা হয়।
(সহীহ আল বুখারী)
হাদীস থেকে জানা যায়, আল্লাহ ও তাঁর
রাসুলকে সর্বাধিক ভালবাসা ঈমানের স্বাদ
অনুভব করার কারন।
আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও আল্লাহর
পথে জিহাদের চেয়ে অন্য কোন
ব্যাক্তি বা বস্তু বেশী প্রিয়
হওয়া দুনিয়ায় বিপদ -মুসীবাত ও
আখিরাতে শাস্তি প্রাপ্তির কারন! তাই
ইবরাহীম (আঃ) এর মত আল্লাহকে অধিক
ভালবাসা দুনিয়া ও
আখিরাতে শাস্তি থেকে মুক্তির উপায়। তাই
আল্লাহ বলেন,
ﻗﻞ ﺍﻥ ﻛﺎﻥ ﺍﺑﺎﺋﻜﻢ ﻭﺍﺑﻨﺎﺋﻜﻢ ﻭﺍﺧﻮﺍﻧﻜﻢ ﻭﺍﺯﻭﺍﺟﻜﻢ
ﻭﻋﺸﻴﻠﺮﺗﻜﻢ ﻭﺍﻣﻮﺍﻝ ﺍﻗﺘﺮﻓﺘﻤﻮﻫﺎ ﻭﺗﺠﺎﺭﺓ ﺗﺨﺸﻮﻥ
ﻛﺴﺎﺩﻫﺎ ﻭﻣﺴﺎﻛﻦ ﺗﺮﺿﻮﻧﻬﺎ ﺍﺣﺐ ﺍﻟﻴﻜﻢ ﻣﻦ ﺍﻟﻠﻪ
ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ﻭﺟﻬﺎﺩ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻠﻪ ﻓﺘﺮﺑﺼﻮﺍ ﺣﺘﻲ ﻳﺎﺗﻲ ﺍﻟﻠﻪ
ﺑﺎﻣﺮﻩ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻻ ﻳﻬﺪﻱ ﺍﻟﻘﻮﻡ থ্রঅ
ﺍﻟﻈﺎﻟﻤﻴﻦ (হে রাসুল সাঃ) তুমি বলে দাও,
তোমাদের পিতা, তোমদের পুত্র, তোমাদের
ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের গোত্র,
তোমাদের সঞ্চিত সম্পদ,
যে ব্যাবসা মন্দার হওয়ার আশংকা তোমরা কর
এবং যে বসবাসস্থান তোমরা পছন্দ কর,
যদি এগুলো আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও তাঁর
পথে জিহাদ করার চেয়ে বেশো প্রিয়
হয়ে থাকে, তহলে আল্লাহর নির্দেশ
আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর। আর আল্লাহ
ফাসিক জাতিকে ভালবাসেন না।
(সুরা আততাওবা, আয়াত নং ২৪)
আল্লাহ তায়ালা আল্লাহ , তাঁর রাসুল
এবং আল্লাহর পথে জিহাদের চেয়ে অন্য
ব্যাক্তি ও বস্তু কে বেশী প্রিয় ঞ্জান
কারীকে দুনিয়া ও আখিরাতের শাস্তির
অপেক্ষায় থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। হযরত
ইবরাহীম (আঃ) শেষ বয়সের একমাত্র
পুত্রকে আল্লাহর ভালবাসায় কুরবানী করার
সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহন করেন। আল্লাহ
তাঁকে সর্বোত্তম জাযা প্রদান করেন। তাঁর
পুত্র ইসমাইল (আঃ)কুরবানীর
পরিবর্তে দুম্বা কুরবানীর
ব্যাবস্থা করেন।
ইহাকে পরবর্তী মুসলিমদের জন্য সুন্নাহ ও
আদর্শ নির্ধারন করেন।
কুরবানী করবে গৃহপালিত পশু কিন্তু
শিক্ষা গ্রহন করবে সবচেয়ে প্রিয় জিনিষ
কুরবানী করার। আল্লাহ তায়ালা পুত্র
কুরবানীর প্রস্তুতির ঘটনা উল্লেখ
করে আল্লাহ বলেন,
ﻓﻠﻤﺎﺑﻠﻎ ﻣﻌﻪ ﺍﻟﺴﻌﻲ ﻗﺎﻝ ﻳﺎﺑﻨﻲ ﺍﻧﻲ ﺍﺭﻱ ﻓﻲ
ﺍﻟﻤﻨﺎﻡ ﺍﻧﻲ ﺍﺫﺑﺤﻚ ﻓﺎﻧﻈﺮ ﻣﺎﺫﺗﺮﻱ ﻳﺎﺍﺑﺖ ﺍﻓﻌﻞ
ﻣﺎﺗﺆﻣﺮ ﺳﺘﺠﺪﻧﻲ ﺍﻥ ﺷﺎﺀ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﺎﺑﺮﻳﻦ
ﻓﻠﻤﺎﺍﺳﻠﻤﺎﻭﺗﻠﻪ ﻟﻠﺠﺒﻴﻦ ﻭﻧﺎﺩﻳﻨﺎﻩ ﺍﻥ ﻳﺎﺍﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﻗﺪ
ﺻﺪﻗﺖ ﺍﻟﺮﺅﻳﺎﺍﻧﺎﻛﺬﺍﻟﻚ ﻧﺠﺰﻱ ﺍﻟﻤﺤﺴﻨﻴﻦ ﺍﻥ ﻫﺬﺍﻟﻬﻮ
ﺍﻟﺒﻼﺀ ﺍﻟﻤﺒﻴﻦ ﻭﻓﺪﻳﻨﺎﻩ ﺑﺬﺑﺢ ﻋﻈﻴﻢ
অর্থ -অতপর যখন হযরত ইসমাইল
(আঃ)পিতা ঈবরাহীহিম (আঃ)এর সাথে চলাফেরার
বয়সে পৌছালো, তখন ঈবরাহীম (আঃ) বললেন,
হে বৎস, নিশ্চয় আমি স্বপ্ন দেখছি যে,
আমি তোমাকে যবেহ করছি। অতএব
তুমি চিন্তা করে দেখ,তোমার কি অভিমত? তখন
সে (ইসমাইল আ.)বলিল, হে আমার পিতা,
আপনি যে দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ
প্রাপ্ত, আপনি তা পলন করুন। অবশ্যই
আপনি আমাকে ধর্য্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত
পাবেন। তারপর যখন তারা উভয়েই আনুগত্য
প্রকাশ করল এবং ঈব্রাহীম (আঃ)তার পুত্র
কে কাত করে শোয়াল, তখন আমি তাকে ডাক
দিয়ে বললাম, হে ঈব্রাহীম,
তুমি স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিয়েছো।
নিশ্চয়ই আমি অনুরূপ ভাবেই সৎ কর্মশীলদের
প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই ইহা স্পষ্ট
পরিক্ষা। আর আমি তাকে তার বিনিময়ে মহান
করবানী প্রদান করেছি। (সুরা আসসফ্ফাত,
আয়াত নং ১০২-১০৭ (চলবে)