Daily Archives: সেপ্টেম্বর 25, 2014

আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার উপায় ৮

আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার উপায়।

মুহাম্মাদ রবিউল বাশার

(পুর্ব প্রকাশিত হওয়ার
পর)

(6)আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার ষষ্টম শর্ত
হলো আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা।
মানুষ যখন নিজের দুর্বলতা ও
অক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়, তখন মহান
ক্ষমতাবান আল্লাহর কাছে দুআ ও প্রার্থনা করে,
আল্লাহ দুআর শর্ত পুরন হলে তা কবুল করেন।
আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেন, ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﻣﺦ ﺍﻟﻌﺒﺎﺩﺍﺕ
ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ
অর্থ দুআ ও প্রার্থনা করা ইবাদাতের মুল।
(জামি তিরমিজী)
মুমিন ব্যাক্তি বিশ্বাস করে যে, আল্লাহর
সাহায্য ছাড়া দ্বীন বিজয়ী করা সম্ভব নয় তাই
দ্বীনকে বিজয়ী করার চেষ্টার
সাথে সাথে আল্লাহর কাছে সাহায্যের
প্রার্থনা করা উচিৎ।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বদর প্রান্তরে উপস্থিত
হয়ে তাঁর জন্য তৈরী করা শামিয়ানার মধ্যে রাত
জেগে ইবাদাত বন্দেগী করতে থাকেন এবং মহান
আল্লাহর কাছে কাকুতি মিনতি করে দুআ
করতে থাকেন। প্রার্থনা করেন, ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺍﻥ ﺗﻬﻠﻚ
ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻌﺼﺎﺑﺔ ﻻﺗﻌﺒﺪ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻓﻨﺼﺮﻙ ﺍﻟﺬﻱ
ﻭﻋﺪﺗﻪ
অর্থ হে আল্লাহ , তুমি যদি এই (মুসলিম)
দলকে (যারা তিন শতের কিছু উর্ধে, যাদের
বাহন কম এবং যুদ্ধাস্ত্রও কম, কাফির ও
মুশরিকদের মাধ্যমে )ধ্বংস
করে দাও,তবে পৃথিবীতে তোমার ইবাদাত
হবে না। অতএব তোমার কাছে সেই সাহায্য
প্রার্থনা করছি, যে সাহায্যের
ওয়াদা তুমি করেছ।
সাহাবীগন ও মহান আল্লাহর কাছে যুদ্ধের
পুর্বে সাহায্য প্রার্থনা করেন। আল্লাহ
তায়ালা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এবং সাহাবীগন (রাঃ)
এর দুআ ও প্রার্থনা কবুল করেন। আল্লাহ বলেন,
ﺍﺫ ﺗﺴﺘﻐﻴﺜﻮﻥ ﺭﺑﻜﻢ ﻓﺎﺳﺘﺠﺎﺏ ﻟﻜﻢ ﺍﻧﻲ ﻣﻤﺪﻛﻢ ﺑﺎﻟﻒ
ﻣﻦ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﻣﺮﺩﻓﻴﻦ ﻭﻣﺎ ﺟﻌﻠﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻻ ﺑﺸﺮﻱ ﻟﻜﻢ
ﻭﻟﺘﻄﻤﺌﻦ ﻗﻠﻮﺑﻜﻢ ﺑﻪ ﻭﻣﺎ ﺍﻟﻨﺼﺮ ﺍﻻ ﻣﻦ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻠﻪ
অর্থ (9)তোমরা যখন তোমাদের রবের
কাছে ফরিয়াদ করতে আরম্ভ করেছিলে, তখন
তিনি তোমাদের ফরিয়াদ এই বলে কবুল
করেছিলেন যে,
আমি তোমাদিগকে ধারাবাহিকভাবে আগত এক
হাজার ফেরেস্তা মাধ্যমে সাহায্য করবো।
(10)আর তো শুধু সুসংবাদ দান করলেন
যাতে তোমাদের মন আশ্বস্ত হতে পারে। আর
সাহায্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ছাড়া অন্য
কারো পক্ষ থেকে হতে পারে না। (সুরা আল
আনফাল)
আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার পর আল্লাহ
সাহায্যের ওয়াদা করে বলেন,
ﺍﺫ ﻳﻮﺣﻲ ﺭﺑﻚ ﺍﻟﻲ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﺍﻧﻲ ﻣﻌﻜﻢ ﻓﺜﺒﺘﻮﺍ ﺍﻟﺬﻳﻦ
ﺍﻣﻨﻮﺍ ﺳﺎﻟﻘﻲ ﻓﻲ ﻗﻠﻮﺏ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻛﻔﺮﻭﺍ ﺍﻟﺮﻋﺐ
ﻓﺎﺿﺮﺑﻮﺍ ﻓﻮﻕ ﺍﻻﻋﻨﺎﻕ ﻭﺍﺿﺮﺑﻮﺍ ﻣﻨﻬﻢ ﻛﻞ ﺑﻨﺎﻥ
অর্থ (12)যখন তোমার রব
ফেরেস্তাদিগকে নির্দেশ দান করেন যে,
আমি তোমাদের সাথে আছি। অতএব
তোমরা মুমিনদের অন্তরসমুহকে ধীরস্থির
করে রাখ। আমি অচিরেই কাফিরদের
অন্তরে ভীতির সঞ্চার করে দেব। অতএব
গর্দানের উপর আঘাত কর এবং তাদে প্রত্যেক
জোড়ায় জোড়ায় আঘাত করো। (সুরা আল আনফাল)
বিভিন্নভাবে আল্লাহ মুমিনদের বদর
ময়দানে সাহায্য করেন। এখানে একটা দিক
মাত্র আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহর বলেন,
ﻭﻟﻘﺪ ﻧﺼﺮﻛﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﺒﺪﺭ ﻭﺍﻧﺘﻢ ﺍﺫﻟﺔ ﻓﺎﺗﻘﻮﺍ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻌﻠﻜﻢ
ﺗﺸﻜﺮﻭﻥ
অর্থ আর নিশ্চয় আল্লাহ
তোমাদেরকে বদরে সাহায্য করেন অথচ
তোমরা ছিলে দুর্বল। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয়
করে চলো। সম্ভবত তোমরা কৃতঙ্গ হবে।
(সুরা আলে ইমরান, আয়াত নং 123)
চরম স্বৈরাচারী জালুত বাদশাহের সাথে মুসলিম
সেনাপতি ও বাদশাহের যুদ্ধ হয়। হযরত তালুতের
সাথে তিন শতাধিক মুমিন ছিলেন। এ
যুদ্ধে মুমিনগন আল্লাহর সাহায্য
পেয়ে বিজয়ী হন। বিজয়ী হওয়ার
পিছনে মুজাহিদদের ময়দানে ধৈয্যের
সাথে টিকে থাকা ও সাহায্যের প্রার্থনা ছিল।
মুমিন মুজাহিদগন প্রার্থনা করেছিলেন, ﺭﺑﻨﺎ ﺍﻓﺮﻍ
ﻋﻠﻴﻨﺎ ﺻﺒﺮﺍ ﻭ
ﺛﺒﺖ ﺍﻗﺪﺍﻣﻨﺎ ﻭﺍﻧﺼﺮﻧﺎ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﻘﻮﻡ ﺍﻟﻜﺎﻓﺮﻳﻦ
অর্থ হে আমাদের রব,আমাদের মনে ধৈয্য
সৃষ্টি করে দাও, আমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখ
এবং কাফির জতির বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য
কর। (সুরা আলবাকারা, আয়াত নং 250)
যুগে যুগে নাবীরাসুল (সাঃ)গনের
সাথী হয়ে আল্লাহওয়ালা ব্যাক্তিরা লড়াই যুদ্ধ
সংগ্রাম করেছেন। আল্লাহর পথে যুদ্ধে বিপদ
মুসীবাতে তাঁদের মনভাঙ্গেনি, দুর্বল
হননি এবং মাথা নত করেননি। তাঁরা যুদ্ধের সময়
প্রার্থনা ও দুআা করেছেন। তাঁদের যুদ্ধের
সময়ের প্রার্থনা ছিল নিম্মরুপ,
ﻭﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﻗﻮﻟﻬﻢ ﺍﻻ ﺍﻥ ﻗﺎﻟﻮﺍ ﺭﺑﻨﺎ ﺍﻏﻔﺮ ﻟﻨﺎ ﺫﻧﻮﺑﻨﺎ
ﻭﺍﺳﺮﺍﻓﻨﺎ ﻓﻲ ﺍﻣﺮﻧﺎﻭﺛﺒﺖ ﺍﻗﺪﺍﻣﻨﺎ ﻭﺍﻧﺼﺮﻧﺎ ﺍﻟﻘﻮﻡ ﺍﻟﻜﺎﻓﺮﻳﻦ
ﻋﻠﻲ
অর্থ তাঁরা অন্য কোন প্রার্থনা করেননি, শুধু
প্রার্থনা করেছে, হে আমাদের রব, আমাদের
গুনাহ ও আমাদের কাজের
বাড়াবাড়ীকে ক্ষমা করে দাও, আমাদের পা দৃঢ়
রাখ এবং কাফির জাতির বিরুদ্ধ আমাদের
সাহায্য কর। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত নং 147)
এ সকল আয়াত থেকে জানা যায় যে, ইসলাম
বিরুধী শক্তির বিরুদ্ধে সাহায্যের দুআ ও
প্রার্থনার সাথে সাথে গুনাহ মাফের,
কাজে বাড়াবাড়ীর ক্ষমার এবং ময়দানে দৃঢ়
থাকার দুআ করা হয়েছে, যা প্রার্থনা কবুল
হওয়ার বেশী উপযুক্ত। আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার
জন্য দুআ ও প্রার্থনা করা শর্ত ও জরুরী। (চলবে