Monthly Archives: সেপ্টেম্বর 2014

কুরবানীর পদ্ধতি ও দোয়া ৮

ঈদুল আদ্বহা ও কুরবানী।

মুহাম্মাদ রবিউল বাশার .

(পুর্ব প্রকাশিত হওয়ার পর)

কুরবানী করার পদ্ধতি ও দুআ :

কুরবানী করার পুর্বে উট ছাড়া অন্যান্য
জীবকে নিম্মলিখিতভাবে কুরবানী করতে হবে।
(ক) ক্বেবলামুখী করে শোয়াতে হবে। (খ)
ছুরী খুব ভালকরে ধার দিতে হবে, যেন জবেহ
করতে সলাস্যা না হয়। পশু কষ্ট পায়! (গ)
যথাসম্ভব নিজে জবেহ করতে হবে। নিজে জবেহ
করা সম্ভব নাহলে কুরবানীর সময় নিকট
থাকতে হবে। (ঘ) জবেহ করার সময় নির্মোক্ত
দুআ পড়তে হবে।
ﻭﺟﻬﺖ ﻭﺟﻬﻲ ﻟﻠﺬﻱ ﻓﻄﺮ ﺍﻟﺴﻤﻮﺍﺕ ﻭﺍﻻﺭﺽ
ﺣﻨﻴﻔﺎﻭﻣﺎﺍﻧﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺸﺮﻛﻴﻦ ﺍﻥ ﺻﻠﻮﺗﻲ ﻭﻧﺴﻜﻲ
ﻭﻣﺤﻴﺎﻱ ﻭﻣﻤﺎﺗﻲ ﻟﻠﻪ ﺭﺏ ﺍﻟﻌﺎﻟﻤﻴﻦ ﻻﺷﺮﻳﻚ ﻟﻪ
ﻭﺑﺬﺍﻟﻚ ﺍﻣﺮﺕ ﻭﺍﻧﺎﺍﻭﻝ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ
(ঙ) “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার
“বলে জবেহ করতে হবে!
(চ) জবেহ করার পর নির্মোক্ত দুআ
পড়তে হবে। ﺍﻟﻬﻢ ﺗﻘﺒﻠﻪ ﻣﻨﻲ ﻛﻤﺎ ﺗﻘﺒﻠﺖ ﻣﻦ
ﺣﺒﻴﺒﻚ ﻣﺤﻤﺪ ﻭﺧﻠﻴﻠﻚ ﺍﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﻋﻠﻴﻬﻤﺎ ﺍﻟﺼﻠﻮﺓ
ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ
(চলবে)

ঈদুল আদ্বহা ও কুরবানি ৭

ঈদুল আদ্বহা ও কুরবানী।

মুহাম্মাদ রবিউল বাশার

(পুর্ব প্রকাশিত হওয়ার পর)

কুরবানীর ফাজীলাত :
(ক) ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺽ ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻌﻢ ﻗﺎﻝ ﻣﺎ
ﻋﻤﻞ ﺍﺩﻣﻲ ﻣﻦ ﻋﻤﻞ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻨﺤﺮ ﺍﺣﺐ ﺍﻟﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ
ﺍﻫﺮﺍﻕ ﺍﻟﺪﻡ ﻭﺍﻧﻪ ﻟﺘﺎﺗﻲ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﺑﻘﺮﻭﻧﻬﺎ
ﻭﺍﺷﻌﺎﺭﻫﺎﻭﺍﻇﻼﻓﻪﺍﻭﺍﻥ ﺍﻟﺪﻡ ﻟﻴﻘﻊ ﻣﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻤﻜﺎﻥ
ﻗﺒﻞ ﺍﻥ ﻳﻘﻊ ﻣﻦ ﺍﻻﺭﺽ ﻓﻄﻴﺒﻮﺍ ﺑﻬﺎ ﻧﻔﺴﺎ ﺭﻭﺍﻩ
ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﺍﺑﻦ
থ্রঅﻣﺎﺟﺔ আইশা সিদ্দীকা (রাঃ)
থেকে বর্নিত। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
* করবানীর দিন (১০ই জিলহাজ্জ) করবানীর
রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে আল্লাহর
কাছে প্রিয় কোন আমল আদম সন্তান করেনা।
*আর করবানীর পশু কিয়ামতের দিন তার শিং,
চুল ও খুর সহ উপস্থিত হবে।
* আর কুরবানীর রক্ত মাটিতে পড়ার
পুর্বে আল্লাহর কাছে কবুল হয়।
অতএব তোমরা আনন্দ ও
আন্তরিকতা নিয়ে কুরবানী কর।
(জামি তিরমিজী ও সুনানে ইবনে মাজাহ)
ﻋﻦ ﺯﻳﺪ ﺑﻦ ﺍﺭﻗﻢ ﺭﺽ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺍﺻﺤﺎﺏ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ
ﺻﻠﻌﻢ ﻳﺎﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﺎﻫﺬﻩ ﺍﻻﺿﺎﺣﻲ؟ ﻗﺎﻝ
ﺳﻨﺔﺍﺑﻴﻜﻢ ﺍﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﻗﺎﻟﻮﺍﻓﻤﺎﻟﻨﺎﻓﻴﻬﺎ ﻳﺎﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ
ﻗﺎﻝ ﺑﻜﻞ ﺷﻌﺮﺓ ﺣﺴﻨﺔﻗﺎﻟﻮﺍ ﻓﺎﻟﺼﻮﻑ؟ ﻗﺎﻝ ﺑﻜﻞ
ﺷﻌﺮﺓ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﻮﻑ ﺣﺴﻨﺔﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ﻭﺍﺣﻤﺪ
যাইদ বিন আরকাম (রাঃ) থেকে বর্নিত!
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর
সাহাবীগন (রাঃ) জিঙ্গাসা করেন,
হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ), এ সকল করবানী কি?
তিনি বলেন, তোমাদের পিতা ইবরাহীমের
সুন্নাহ। তাঁরা প্রশ্ন করেন,
তাহলে আমাদের উপকার বা লাভভ কি আছে?
তিনি বলেন, প্রত্যেক চুলে সাওয়াব।
তাঁরা প্রশ্ন করেন, তাহলে পশমে সাওয়াব
হবে? তিনি বলেন, পশমের প্রত্যেক
চুলে সাওয়াব। (সুনানে ইবনে মাজা ও
মুসনাদে আহমাদ)
ﻋﻦ ﺍﺑﻲ ﺳﻌﻴﺪ ﺭﺽ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻌﻢ
ﻗﻮﻣﻲ ﺍﻟﻲ ﺍﺿﺤﻴﺘﻚ ﻓﺎﺷﻬﺪﻳﻬﺎﻓﺎﻥ ﻟﻚ ﺑﺎﻭﻝ ﻗﻄﺮﺓ
ﺗﻘﻄﺮ ﻣﻦ ﺩﻣﻬﺎﺍﻥ ﻳﻐﻔﺮ ﻟﻚ ﻣﺎﺳﻠﻒ ﻣﻦ ﺫﻧﻮﺑﻚ ﻗﺎﻟﺖ
ﻳﺎﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻨﺎ ﺧﺎﺻﺔ ﺍﻫﻞ ﺍﻟﺒﻴﺖ ﺍﻭﻟﻨﺎﻭﻟﻠﻤﺴﻠﻤﻴﻦ؟
ﻗﺎﻝ ﺑﻞ ﻟﻨﺎ ﻭﻟﻠﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺰﺍﺭ –
অর্থ আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্নিত।
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ
করেছেন, হে ফাতিমা, তুমি তোমার কুরবানীর
পশুর নিকট দাড়াও এবং প্রতক্ষ্য কর।
কেননা কুরবানীর প্রথম রক্তের ফোটা পড়ার
সাথে সাথে তোমার পুর্বের গুনাহ মাফ
করা হবে। তিনি বলেন,হে আল্লাহর রাসুল,
এবিধান আমাদের আহলে বাইতের জন্য খাচ,
না আমাদের এবং মুসলিম উম্মাতের জন্য
ব্যাপক। (বাজ্জার)
ﻋﻦ ﺍﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺽ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻌﻢ ﻣﻦ
ﻭﺟﺪ ﺳﻌﺔ ﻟﻴﻀﺤﻲ ﻭﻟﻢ ﻳﻀﺢ ﻓﻼﻳﻘﺮﺏ ﻣﺼﻼﻧﺎ ﺭﻭﺍﻩ
ﺍﺣﻤﺪ
অর্থ আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্নিত।
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন,
যার কুরবানী করার জন্য
স্বচ্ছলতা আছে অথচ কুরবানী করবে না,
সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়।
(মুসনাদে আহমাদ)
কুরবানী কারীর সুন্নাত আমল :
জুলহাজ্জ মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকে ঈদের
নামাজ না আদায় করা পর্যন্ত শরীরের কোন
অংশের চুল কাটবে না এবং নোখ কাটবে না।
আল্লাহর রাসুল (সেঃ) বলেছেন,
ﻣﻦ ﺭﺍﻱ ﻫﻼﻝ ﺫﻱ ﺍﻟﺤﺠﺔ ﻭﺍﺭﺍﺩ ﺍﻥ ﻳﻀﺤﻲ ﻓﻼﻳﺎﺧﺬ
ﻣﻦ ﺷﻌﺮﻩ ﻭﻻﻣﻦ ﺍﻇﻔﺎﺭﻩ ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ
অর্থ যে ব্যাক্তি জুলহাজ্জ মাসের চাঁদ
দেখতে পাবে এবং কুরবানী করার ইচ্ছা করবে,
সে যেন তার চুল না কাটে এবং তার নোখও
না কাটে। (সহীহ মুসলিম)
যে ব্যাক্তি কুরবানী করতে সক্ষম না, তার
জন্যে ঈদের দিন চুল ও নোখ কাটলে কুরবানীর
সাওয়াব পাবে।
আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আলআাস (রঃ)
থেকে বর্নিত! রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
আল্লাহ আমাকে জুলহাজ্জ মাসের দশ
তারিখে ঈদ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ
ঐদিন উম্মাতের ঈদ নির্ধারন করেছেন।
একজন ব্যাক্তি প্রশ্ন করলো, হে আল্লাহর
রাসুল (সাঃ), একজন আমাকে দুধ খাওয়ার জন্য
বকরী দিয়েছে, আমি কি তা কুরবানী করবো?না,
তুমি ঈদের দিন চুল কাটবে, গোফ খাটো করবে,
নোখ কাটবে এবং নাভীর নীচের চুল কাটবে। এর
মাধ্যমে কুরবানীর সাওয়াব পাবে। (মাজমাউয
যাওয়ায়েদ)
কুরবানীর মুল প্রানশক্তি কি?
আল্লাহ ভক্তি ও আল্লাহ ভীতিই
হলো কুরবানীর মুলপ্রানশক্তি।
জাইিলী যুগে কুরবানী করে গোস্ত এবং রক্ত
কাবা শারীফে মাখিয়ে রাখতো। আল্লাহর
কাছে কুরবানীর গোস্ত ও রক্ত পৌছে না।
কুরবানীর পশুর গলায় ছুরী চালানোর নাম
কুরবানী নয়। বরং সমস্ত কুপ্রবৃত্তির
বিরুদ্ধে ছুরী চালানোই মুলত কুরবানী।
পশুর গোস্ত খাওয়ার জাতীয় উৎসব পালন
করা হয় ঠিক। আল্লাহ প্রেম ও আল্লাহ ভীতির
উৎসবে পরিনত হওয়া প্রয়োজন। তাই আল্লাহ
বলেন,
ﻟﻦ ﻳﻨﺎﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﺤﻮﻣﻬﺎ ﻭﻻﺩﻣﺎﺋﻬﺎ ﻭﻟﻜﻦ ﻳﻨﺎﻟﻪ ﺍﻟﺘﻘﻮﻱ
ﻣﻨﻜﻢ
অর্থ আল্লাহর কাছে কখনো কুরবানীর পশুর
গোস্তও পৌছে না, রক্তও পৌছে না। কিন্তু
তোমাদের তাকওয়া পৌছে। (সুরা আলহাজ্জ,
আয়াত নং )
কুরবানীর মুহুর্তে অন্তরের অবস্থা যেমন
উচিৎ, অন্তরের অবস্থা সে রকম না হলে,
আল্লাহ সে কুরবানী কবুল করেন না। আর
তাহলো মাহাব্বাৎ ও তাকওয়া। আল্লাহ বলেন,
ﺍﻧﻤﺎ ﻳﺘﻘﺒﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺘﻘﻴﻦ
অর্থ আল্লাহ শুধুমাত্র মুত্তাকীদের আমল
কবুল করেন। (সুরা আল মাইদাহ, আয়াত নং )
( চলবে)