আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার উপায়।

আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার উপায়।

মুহাম্মাদ রবিউল বাশার

(পুর্ব প্রকাশিত হওয়ার
পর)(4)

(2)আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার দ্বিতীয় শর্ত
হলো সবর ও ধৈয্য।
মানুষকে দুনিয়ার শান্তি এবং আখিরাতে মুক্তির
পথ দেখানোর জন্য নাবীরাসুল (সাঃ) গনের
আগমন। সকলের দাওয়াত ছিল, ﻻﺍﻟﻪ ﺍﻻ ﺍﻟﻠﻪ (অর্থ
আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই),তিনি আল্লাহর
নাবী বা রাসুল
এবং পরবর্তী কালে আখিরাতে জীবনের হিসাব ও
কর্মফল অনুযায়ী জান্নাত বা জাহান্নাম। এই
দাওয়াতের ভিত্তিতে মানুষের চিন্তার
পরিবর্তন, দাওয়াত গ্রহনকারীব্যক্তিদের
সংগঠিত করন এবং তারবিয়াত ওপ্রশিক্ষন
প্রদান, তাদেরকে সাথে নিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্র
পরিচ্ছন্ন করার সর্বাত্তক
প্রচেষ্টা তাঁরা করেছিলেন। দায়িত্ব পালনে,
মার্যাদা পাওয়া ও আখিরাতে প্রতিদান পাওয়ার
দিক দিয়ে তাঁরা সকলে সফল। কিন্ত্র দুনিয়ায়
রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনে অনেকে সফল হয়েছেন।
আবার অনেকে দুনিয়াতে রাষ্ট্র গঠনে সফলতার
মুখ দেখেননি। তাঁরা সবর ও ধৈয্যের
সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। আল্লাহর সাহায্য
তাঁরা পেয়েছেন। আল্লাহর সাহায্য বন্চিত
তাঁরা হননি। বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ (সাঃ) যখন
দাওয়াত শুরু করেন, তাঁকে কবি, যাদুকর, গনৎকার,
পাগল,
ইবনে আবী কাবশা ইত্যাদি বিভিন্নভাবে বিদ্রুপ
করে তাঁর দাওয়াতকে গুরুত্বহীন, শোনাবোঝার
অযোগ্য, ভ্রুক্ষেপ অযোগ্য করার
চেষ্টা করতে থাকে! তাঁকে শান্তনা দিয়ে আয়াত
অবতীর্ন করে আল্লাহ বলেন,
ﻗﺪﻧﻌﻠﻢ ﺍﻧﻪ ﻟﻴﺤﺰﻧﻚ ﺍﻟﺬﻱ ﻳﻘﻮﻟﻮﻥ ﻓﺎﻧﻬﻢ ﻻﻳﻜﺬﺑﻮﻧﻚ
ﻭﻟﻜﻦ ﺍﻟﻈﺎﻟﻤﻴﻦ ﺑﺎﻳﺎﺕ ﺍﻟﻠﻪ 0ﻥﻭﺪﺤﺠﻳ ﻭﻟﻘﺪﻛﺬﺑﺖ
ﺭﺳﻞ ﻣﻦ ﻗﺒﻠﻚ ﻓﺼﺒﺮﻭﺍ ﻋﻠﻲ ﻣﺎ ﻛﺬﺑﻮﺍ ﻭﺍﻭﺫﻭﺍ ﺣﺘﻲ
ﺍﺗﺎﻫﻢ ﻧﺼﺮﻧﺎﻭﻻﻣﺒﺪﻝ ﻟﻜﻠﻤﺎﺕ )33(থ্রঅ
ﺍﻟﻠﻪ নিশ্চয় আমি জানি যে, তারা (ইসলাম
বিরুধী মুশরিকরা)যে সব অভিযোগ করে,
তা তোমাকে ব্যাথা ও দুঃখ দিচ্ছে।
তারা তোমাকে মিথ্যাবাদী বলছে না। কিন্তু
জালিমরা আল্লাহর আয়াতসমুহ অস্বীকার করছে।
(34)তোঁমার পুর্বে অনেক
রাসুলকে মিথ্যাবাদী বলা হয়েছিল। তারপর
তাঁরা তাঁদের মিথ্যাবাদী সাব্যস্থ করায়
এবং তাঁরা নির্যাতিত হওয়ায় সবর ও ধৈয্যধারন
করেছিল। এমনকি তাঁদের কাছে আমাদ সাহায্য ও
সহায়তা আগমন করেছিল। (এটা আল্লাহর নিয়ম)
আর আল্লাহর নিয়মের বানীর কোন
পরিবর্তনকারী নেই। (সুরা আল আনআম)
যুগে যুগে নাবীরাসুলগন সত্যবিরুদী ও ইসলাম
বিরুধী শক্তির পক্ষ থেকে সত্য ও
দ্বীনে ইসলামের পক্ষে দাওয়াত ও তাবলীগের
কাজ করার কারনে মানষিকভাবে,
দৈহিকভাবে এবং আর্থিকভাবে নির্যাতিত হন।
তাঁরা আল্লাহ কতৃক নির্ধারিত ও নিদ্দিষ্ট সময়
পর্যন্ত সবর ও ধৈয্য করায় আল্লাহর সাহায্য ও
সহায়তা লাভ করে।
আসলে সবর ও ধৈয্যধারন করা আল্লাহর সাহায্য
পাওয়া ও সফলতা লাভের চাবিকাঠি। বেসবর ও
অধৈয্যব্যক্তি জীবনে ব্যর্থতা ছাড়া সফলতার মুখ
দেখতে পায়না।
এজন্যই মহান আল্লাহ মুমিনদের সম্মোধন
করে বলেন,
ﻳﺎﺍﻳﻬﺎﺍﻟﺬﻳﻦ ﺍﻣﻨﻮﺍ ﺍﺳﺘﻌﻴﻨﻮﺍ ﺑﺎﻟﺼﺒﺮ ﻭﺍﻟﺼﻠﻮﺓ ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ
ﻣﻊ ﺍﻟﺼﺎﺑﺮﻳﻦ
অর্থ ওহে, যারা ঈমান এনেছো তোমরা সবর
এবং স্বালাতের দারা সাহায্য প্রার্থনা করো।
নিশ্চয় আল্লাহ সবরকারীদের সাথে আছেন।
(সুরা আলবাকারা, আয়াত নং 153)
সবরের বিভিন্ন অর্থ আছে। সবর অর্থ নিরাশ
না হওয়া, তাড়াহুড়া না করা ,অস্থির না হওয়া,
ব্যস্থ না হওয়া,নীতির উপর ও আদর্শের উপর অটল
থাকা, লক্ষ্যে পৌছাতে সকল বিপদ মুসীবাত বরন
করা ইত্যাদি।
আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার জন্য নিরাশ না হওয়া,
তাড়াহুড়া না করা, অস্থির না হওয়া, ব্যস্ত
না হওয়া, ইসলামী আদর্শের উপর অটল থাকা,
ইসলামের বিজয় না হওয়া পর্যন্ত সকল বিপদ বরন
করে নেওয়া।
পুর্ববর্তী উম্মাতদের এবং নাবীরাসুল (সাঃ)
গনের দাওয়াত ও তাবলীগের অবাধ্যদের
লম্বা লম্বা অবকাশ দেওয়া হয়েছে।
এমনকি দীর্ঘদিন তাদের উপর আযাব না আসার
কারনে নাবীরাসুল (সাঃ) গন এরুপ
ধারনা করে নিরাশ হয়ে পড়েছেন যে,আল্লাহ
প্রদত্ব আাযাবের ইজমালী ওয়াদার যে অবকাশ
তাঁরা নিজেদের অনুমানের ভিত্তিতে স্থির
করে রেখেছিলেন,সে অবকাশের সময়ে অবাধ্যদের
আযাব আসবে না এবং সত্যের বিজয় প্রকাশ
পাবে না। এবং নাবীরাসুল (সাঃ)গন প্রবল
ধারনা পোষন করতে থাকেন যে, অনুমানের
মাধ্যমে আল্লাহর ওয়াদার সময় নির্ধারন করার
ব্যপারি তাঁদের ভুল হয়েছে। কেননা, আল্লাহ
তো কোন নির্দিষ্ট সময় বলননি। তাঁরা বিশেষ
বিশেষ ইঙ্গিতের মাধ্যমেই একটি সময় নির্দিষ্ট
করে নিয়েছিলেন! এমনকি নৈরশ্যজনক
পরিস্থিতিতে তাঁদের কাছে আল্লাহর সাহায্য
এসে যায়। অর্থাৎ ওয়াদা অনুযায়ী অবাধ্যদের
উপর আল্লাহর শাস্তি এসে যায়। আল্লাহ এ
সম্পর্কে বলেন,
ﺣﺘﻲ ﺍﺫﺍ ﺍﺳﺘﻴﺌﺲ ﺍﻟﺮﺳﻞ ﻭﻇﻨﻮﺍ ﺍﻧﻬﻢ ﻗﺪ ﻛﺬﺑﻮﺍ
ﺣﺘﻲ ﺟﺎﺋﻬﻢ ﻧﺼﺮﻧﺎ ﻓﻨﺠﻲ ﻣﻦ ﻧﺸﺎﺀ ﻭﻻﻳﺮﺩ ﺑﺎﺳﻨﺎ ﻋﻦ
ﺍﻟﻘﻮﻡ ﺍﻟﻤﺠﺮﻣﻴﻦ
অর্থ এমনকি রাসুলগন (সাঃ) যখন নৈরশ্যে পতিম
হয়ে যেতেন এবং এরুপ ধারনা করতে শুরু করতেন
যে,তাঁদের অনুমান বুঝি মিথ্যায় পরিনত হওয়ার
উপক্রম হয়েছে। তখন তাঁদের কাছে আমার
সাহায্য পৌছে। তারপর যাকে চেয়েছি,
তাকে মুক্তি দওয়া হয়েছে। আর আমার
শাস্তি অপরাধী সম্প্রদায় থেকে ফেরৎ যায়না।
(সুরা ইউসুফ, আয়াত নং 110)
আন্দোলনের কঠিন ময়দানে বিপদ
মুসীবাতে মনভাঙ্গা না হওয়া, দুর্বলতা প্রদর্শন
না করা এবং মিথ্যে ও বাতিলের সামনে মাথানত
না করাও ধৈয্য ও সবর। মহান আল্লাহ বলেন
ﻭﻛﺎﻱ ﻣﻦ ﻧﺒﻲ ﻗﺎﺗﻞ ﻣﻌﻪ ﺭﺑﻴﻮﻥ ﻛﺜﻴﺮ ﻓﻤﺎﻭﻫﻨﻮﺍ ﻟﻤﺎ
ﺍﺻﺎﺑﻬﻢ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻣﺎ ﺿﻌﻔﻮﺍ ﻭﻣﺎ ﺍﺳﺘﻜﺎﻧﻮﺍ
ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻳﺤﺐ ﺍﻟﺼﺎﺑﺮﻳﻦ
অর্থ বহু নাবী অতিবাহিত হয়েছেন, যাদের
সাথে মিলে বহু আল্লাহ ওয়ালা ব্যক্তিরা লড়াই
যুদ্ধ করেছেন। সুতরাং তাঁরা আল্লাহর পথে বিপদ
মুসীবাতে আক্রান্ত হওয়ায় মনভাঙ্গা হননি,
দুর্বলতা দেখাননি এবং মাথানত করেননি। আর
আল্লাহ এই ধরনের সবরকারীদের পছন্দ করেন।
(সুরা আলে ইমরান আয়াত নং 146)
অত্র আয়াতে আল্লাহর নাবীগন (সাঃ) এবং তাঁদের
সাথে আল্লাহওয়ালাগন ইসলামের জন্য কঠিন
সংগ্রামের ক্ষেত্রে বিপদ
মুসীবাতে হিম্মাৎহারা হননি, দুর্বলতা প্রদর্শন
করেননি এবং অন্যায়ের সামনে মাথানত
করেননি। এটাকে সবর ও ধৈয্য বলা হয়েছে।
ধৈয্যশীলদের আল্লাহর ভালবাসার অর্থ সাহায্য
করাও। অতএব আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার জন্য
কঠিন মুহুর্তে সবর ও ধৈয্য হাত
ছাড়া করা যাবে না। (চলবে)

About আলোর কাফেলার সঙ্গী

আমি একজন মুবাল্লিগ ... আল্লাহ আমাকে কবুল করুন. আমিন

Posted on সেপ্টেম্বর 20, 2014, in Uncategorized. Bookmark the permalink. এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান